গাজীপুরের ভবানীপুর বিটে বিঘার বিঘা বনভূমি দখল, গোপনে চলছে বাণিজ্য
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের ভবানীপুর বিটে ব্যাপক হারে বনভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীন ভাওয়াল রেঞ্জের এই বিটে দখলযজ্ঞ বাড়লেও বন কর্মকর্তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগে গোপনে বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ভবানীপুর বাজার থেকে সাফারি পার্ক রোডে জব্বার ভূঁইয়ার বাড়ির পশ্চিম পাশে ১৫-১৬ বছর আগে আধা বিঘা জমি কিনেন ঢাকার ব্যবসায়ী খোকন মিয়া। স্থানীয় দুজন ব্যক্তি দখল সূত্রে মাহনা ভবানীপুর মৌজার সিএস ১৪২২ নং দাগের ওই জমি বিক্রি করেন। সরকারি নথিপত্রে সংরক্ষিত বনভূমি হওয়ায় খোকন মিয়া চেষ্টা করেও সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছিলেন না।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন স্থানে বনভূমি দখল ও গাছ কাটা শুরু হয়। এই সুযোগে তিনি বড় টিনশেড গোডাউন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এখন কাজ শেষ পর্যায়ে।
স্থাপনাটি গড়ে তোলার সময় বিট ও রেঞ্জ অফিস কোন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। সেখানে আক্রমণাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি না হলেও কর্মকর্তারা চুপ করে বসে থাকেন।
ভবানীপুরের সাফারি পার্ক রোডে বনভূমিতে খোকনের নির্মাণাধীন গোডাউন
দুই কোটি টাকা মূল্যের ওই বনভূমিতে গোডাউন নির্মাণের সুযোগ পেয়ে খোকন মিয়া পাকা রাস্তা ঘেঁষে গোডাউনটির সামনের অংশে পাঁচ রুমের একটি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মার্কেটটির কাজও এখন শেষ পর্যায়ে।
খোকন মিয়ার গোডাউনের একটু পশ্চিমে মতি ডাক্তারের বাড়ির পাশে সিএস ১৪২২ নং দাগের প্রায় পাঁচ শতাংশ বনভূমি দখল করে দোকানপাট নির্মাণ করছেন প্যাকলাইন কার্টন কারখানার মালিক মিজানুর রহমান। বিট অফিস প্রথমে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরে অনুমতি নিয়ে আবার কাজ শুরু হয়।
এভাবে দেড় মাস ধরে কাজ চলছে। প্যাকলাইন কারখানার ভেতরেও জবর দখলকৃত বনভূমি রয়েছে বলে জানা গেছে।
ভবানীপুরের মোহাম্মদীয়া গার্মেন্টসের অল্প উত্তরে ফাইজ উদ্দিনের বাড়ির পূর্ব পাশে আরএস ৮০৫৭ নং দাগের তিন বিঘা বনভূমি দখল করে ১০ ফুট উঁচু পাকা বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। কেটে ফেলা হয়েছে কিছু গাছ।
ঢাকার এক ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে এ দখলযজ্ঞ চালাচ্ছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় এক দালাল। এক মাস ধরে কাজ চললেও বিট অফিস ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এলাকাবাসী জানান, ওই স্থানে বর্তমানে জমির বিঘাপ্রতি বাজারমূল্য দুই কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলকৃত বনভূমির মূল্য দাঁড়ায় ছয় কোটি টাকা।
বাঘের বাজারের পশ্চিম দিকে স্কুল রোড দিয়ে কিছুদূর এগোলে চায়না টিন কারখানা। কারখানাটির উত্তর পাশে এক নারী সিএস ১৪৫১ নং দাগের তিন বিঘা বনভূমি দখল করে প্লট আকারে বিক্রি করছেন।
ইতিমধ্যে প্লট কিনে অন্তত সাতজন পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। কারও কারও বাড়ির কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকাশ্য দিবালোকে কাজ চললেও বিট অফিসের ভ্রুক্ষেপ নেই।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ওই এলাকায় বর্তমানে জমির বিঘাপ্রতি বাজারমূল্য অন্তত চার কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলকৃত বনভূমির মূল্য দাঁড়ায় ১২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে জবর দখলের পর এখন আপস দখল বেড়েছে। দখল প্রতিরোধ করার সুযোগ থাকলেও বন কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ কিছু মহল্লা ব্যতীত অন্য কোথাও আক্রমণাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
সূত্র আরও জানায়, বিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ভবানীপুর বিটে যোগদানের পর বনভূমি দখল বাড়তে থাকে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিটের বিভিন্ন এলাকায় শত শত বাড়িঘর, দোকানপাট ও কারখানার স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এখন মামলা না দেওয়ার কথা বলে দখলকারীদের কাছ থেকে একাধিক বনকর্মীর মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভবানীপুর বিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, সাফারি পার্ক রোডে হাজার হাজার ঘর হচ্ছে। তারা প্রত্যেকটি ঘরের কোনায় কোনায় গিয়েছেন। কেউ কথা শোনে না। মামলা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের ভবানীপুরে ২০ কোটি টাকার বনভূমি দখল, বন কর্মকর্তারা নীরব