গাজীপুরের ভবানীপুরে ২০ কোটি টাকার বনভূমি দখল, বন কর্মকর্তারা নীরব

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরে ২০ কোটি টাকা মূল্যের বনভূমি দখল করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এখন চলছে স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীন ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের ভবানীপুর এলাকায় এ দখলযজ্ঞ ঘটছে। কিন্তু বন কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, ভবানীপুর বাজার এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন পূর্ব পাশে মাহনা ভবানীপুর মৌজার সিএস ১৪২২ ও আরএস ৮৩৫১ নং দাগের সংরক্ষিত বনভূমি। হোতাপাড়া এলাকার গ্যালাক্সির মালিক তৌফিক উদ্দিন আহম্মেদ ১৯৯২ সালে স্থানীয় আবদুর রশিদ নামের একজনের কাছ থেকে সেখানকার ৬৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। জমির দলিল তার স্ত্রী নজীবা বেগমের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়।
পরে ঢাকার গুলশানের বাসিন্দা তৌফিক উদ্দিন আহম্মেদ সাইনবোর্ড স্থাপন করে তা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু বন বিভাগের বাধার মুখে বারবার ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১৩ মে বন বিভাগের পক্ষে রায় দেন উচ্চ আদালত। যার রিট নম্বর ১০২৪৯/২০১৩। পরে তফসিলভুক্ত ৪ একর ১০ শতাংশ সম্পত্তিকে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়।
এরপর তৌফিক উদ্দিন আহম্মেদ চুপসে যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে তিনি আবার তৎপর হন। এবার ১২ ফুট উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে প্রায় দুই বিঘা আয়তনের ওই বনভূমি দখলে নেওয়া হয়। নির্মাণ কাজ তদারকি করেন কেয়ারটেকার সেলিম।

বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে বনের গাছপালা


এলাকাবাসী জানান, ওই স্থানে বর্তমানে জমির বিঘাপ্রতি বাজারমূল্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলকৃত বনভূমির মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকা। বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মাণ কাজ দুই সপ্তাহ ধরে অবাধে করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে জবর দখলের পাশাপাশি অনেক আপস দখল হচ্ছে। তৌফিক উদ্দিন আহম্মেদের দখলীয় কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চললেও বিট অফিস ও রেঞ্জ অফিস কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বন কর্মকর্তারা চাইলে তা প্রতিরোধ করতে পারতেন। যেমন বানিয়ারচালা এলাকার ইউনিয়ন লেবেল কারখানার একটি স্থাপনার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু মহল্লা ব্যতীত অন্য কোথাও আক্রমণাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তৌফিক উদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ভবানীপুর বিট কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, ওই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। যৌথ বাহিনীর কাছে লিস্ট দেওয়া হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button