গাজীপুরে ‘নাক ডুবিয়ে ঘুষ খাচ্ছেন’ সাব-রেজিস্ট্রার বাতেন
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরে যে কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য হয়, তার মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অন্যতম। যেখানে দুর্নীতির চর্চা পুরনো হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি কম।
ফলে সেবা নিতে গিয়ে জনসাধারণকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। টাকা না দিলে হয়রানি ও ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
নগরীর মারিয়ালীতে অবস্থিত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় গাজীপুর সদর ও নিচ তলায় যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। অফিস দুটিতে টেবিলে টেবিলে চলে লেনদেন।
সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন একাই দুটি অফিস চালাচ্ছেন। তিনি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেই ঘুষের নতুন রেট চাপিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে দলিল লিখকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন দলিল দাতা বা গ্রহীতার আয়কর সংক্রান্ত টিআইএন বা টিনের রিটার্ন না থাকলে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেন। হেবা দলিলে জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা ও ১০ শতাংশের বেশি হলে ২০-৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানির ব্যাংক মর্টগেজ দলিলে ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী নেন এক লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। বণ্টননামা দলিলে ৫০ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। ভুল সংশোধন ও ঘোষণাপত্র দলিলে নেওয়া হয় ১০-৫০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া কমিশনিং দলিলের ক্ষেত্রে বায়না, হেবা ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। ভুল সংশোধন ও ঘোষণাপত্র দলিলে নেওয়া হয় ২০-৫০ হাজার টাকা। ঢাকায় হলে সরকারি ফির নামে ১২ হাজার টাকা ও স্থানীয়ভাবে ৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ জে-ওয়ান অর্থাৎ সরকারি ফি ৩০০ টাকা ও যাতায়াত ফি প্রতি কিলোমিটারে ২০ টাকা।
সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন এসব ঘুষের টাকা তিনজন কর্মচারীর মাধ্যমে বুঝে নেন। তারা সাব-রেজিস্ট্রারের খাস কামরার দায়িত্বে আছেন। টাকা না পেলে নানা কারণ দেখিয়ে দলিল ফেরত দেওয়া হয়।
এদিকে সাব-রেজিস্ট্রারের খাস কামরার বাইরে সেরেস্তার নামে পৃথক টাকা আদায় করা হয়। সেখানে সাফ-কবলা দলিলে রেট ২৫০০ টাকা। আর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি, ঘোষণাপত্র, হেবা, বায়না, চুক্তিনামা, বণ্টননামা, এওয়াজ, হেবাবিল এওয়াজ ও ভুল সংশোধন দলিলে ৩১০০ টাকা করে দিতে হয়।
সদর সাব-রেজিস্ট্র অফিসে মোহরার গাজী উম্মে আসমা ও যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আনোয়ারা বেগম সেরেস্তার টাকা বুঝে নেন। আদায়কৃত টাকা থেকে দলিলপ্রতি নকলনবিশরা পান ৬০০ টাকা, দলিল লিখক সমিতি পায় ১২০০ টাকা ও মসজিদ বাবদ জমা হয় ২০০ টাকা। বাকি টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন হয়।
এ ছাড়া উভয় অফিসে দলিলের মূল্য থেকে প্রতি লাখে দেড় শতাংশ করে আদায় করা হয়। এই খাতের পুরো টাকা শুধু অফিশিয়ালি ভাগ-বাটোয়ারা হয়। এসব লেনদেন ওপেন সিক্রেট।
গাজীপুর সদর ও যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বর্তমানে গড়ে দেড় শতাধিক দলিল রেজিস্ট্রি হয়। যা মাসে দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার। এভাবে দলিলগুলো থেকে মাসে মোটা অঙ্কের টাকার বাণিজ্য হয়।
দলিল লিখকরা জানান, সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গত এপ্রিলে দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা হানা দেওয়ার পর তার দাপট আরও বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা কঠোর না হলে বাণিজ্য থামবে না।
এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন ও সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মোহরার গাজী উম্মে আসমার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।
যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সেরেস্তার দায়িত্বে থাকা আনোয়ারা বেগম ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, আপনি এসে স্যারের সাথে যোগাযোগ করেন। আমাকে এগুলো বলে কোন লাভ নেই।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে সাব-রেজিস্ট্রার বাতেনের ঘুষ বাণিজ্য রমরমা