কাপাসিয়া পাইলট হাইস্কুলের ‘৫ শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্য’ চলছেই

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের আলোচিত পাঁচ সহকারী শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্য চলছেই। বারবার তদন্ত হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

ফলে তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে। আর্থিক চাপ থাকলেও অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে পড়েছেন বেকায়দায়।

অভিযুক্তরা হলেন বিজ্ঞানের শিক্ষক আলতামাসুল ইসলাম, ইংরেজির শিক্ষক সেলিমা বেগম, ইংরেজির শিক্ষক মনির হোসেন, গণিতের শিক্ষক আক্তার হোসেন ও ধর্মের শিক্ষক মো. জাকারিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলের পশ্চিম পাশে হলি হোম হাসপাতালের পেছনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন শিক্ষক আলতামাসুল ইসলাম, সেলিমা বেগম ও মো. জাকারিয়া। সেন্টারটি প্রায় চার বছর ধরে চলছে।

এই কোচিং সেন্টারে পাইলট স্কুলের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে পড়ানো হয়। জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে মাসে আদায় হয় দেড় লাখ টাকা।

কাপাসিয়া বাজারের ভূঁইয়া মার্কেটের পেছনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন শিক্ষক মনির হোসেন। তিনি বড় কোচিংবাজ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তার সেন্টারে শিক্ষার্থীও অন্যদের তুলনায় বেশি।

মনির হোসেন আগে বরুন রোডের সাবেক রিংকু মাল্টিমিডিয়া স্কুলে কোচিং সেন্টার চালাতেন। ছয় মাস আগে তিনি স্থান পরিবর্তন করেন।

এ ছাড়া পাবুর রোডের আকবর আলীর বাড়িতে বাসা কাম কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন শিক্ষক আক্তার হোসেন। তার সেন্টারে শিক্ষার্থী শতাধিক।

অভিভাবকরা জানান, যারা কোচিং করে না, শিক্ষকরা ক্লাসে তাদেরকে কম গুরুত্ব দেন। ছোটখাট বিষয়েও গালমন্দ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করে ও মানসিক আঘাত পায়। তাই বাধ্য হয়ে কোচিংয়ে দিতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পড়ালেখায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে অল্প টাকায় কোচিং করানোর সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কোচিং বাণিজ্যের সুবিধার্থে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে তা অদ্যাবধি চালু করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক ফাইজ উদ্দিন ফকির ওই শিক্ষকদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।

অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জনকে পড়াতে পারেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বা অন্য কোথাও পড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হিসেবে সাময়িক বা চূড়ান্ত বরখাস্ত, এমপিওভুক্তি বাতিল বা স্থগিত ও বেতন-ভাতা বা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিতের বিধান রয়েছে।

এদিকে গত বছরের ১৫ মার্চ অনলাইন সংবাদমাধ্যম আলোকিত নিউজে ওই পাঁচ শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালামকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলে তদন্তে গেলে প্রধান শিক্ষক ফাইজ উদ্দিন ফকির অভিযুক্তদের রক্ষায় তৎপর হন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তাও তড়িৎ গতিতে চুপসে যান।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম দাবি করেন, ওই শিক্ষকরা কোচিং করান না, কিছু কিছু প্রাইভেট পড়ান। তারা লিখিতভাবে অঙ্গীকার করেছেন, নিয়মের বাইরে আর পড়াবেন না।

এর আগে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়ে স্বয়ং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করেছিলেন। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি।

তবে রেবেকা সুলতানা বলেছেন, তিনি তদন্ত প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তার জানা নেই।

আরও খবর

Back to top button