গাজীপুরে সাবেক এমপি ইকবালের দখলে ২০ কোটি টাকার বনভূমি, চলছে গার্মেন্টস ব্যবসা
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরে জবর দখলকৃত বনভূমিতে স্থাপনা নির্মাণকারী পোশাক কারখানা গ্লোবাল ফিটে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে না। চলছে আরও স্থাপনা নির্মাণের তৎপরতা।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকার বাংলাবাজার রোডে কারখানাটি অবস্থিত। যা সাবেক বেন্টলী নামে বেশি পরিচিত।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ঢাকার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. এইচ বি এম ইকবাল আড়াইশ প্রসাদ মৌজায় দেড় যুগ আগে বিপুল পরিমাণ জমি কিনেন। তখন জোত জমির সঙ্গে সিএস ১৯ এবং আরএস ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২, ৪৬ ও ৪৭ নং দাগের ‘২০ ধারা ঘোষিত’ তিন একর ১০ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমি দখল করা হয়। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
দখলকৃত অংশে কারখানার মূল ভবনের একাংশ, দুটি গেট, গাড়ি পার্কিং এরিয়া ও বেশ কিছু অংশে অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি অংশ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভোগদখল করা হচ্ছে।
প্রথম চালু হওয়া বেন্টলী সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এলিগেন্স সোয়েটার লিমিটেড ওই স্থাপনা ভাড়া নেয়। কয়েক বছর পর তারা অন্যত্র চলে গেলে ২০২২ সালে জমিসহ স্থাপনা ভাড়া নেয় গ্লোবাল ফিট (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
গ্লোবাল ফিটের মালিক ২০২৩ সালের জুনে কারখানা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করলে সাবেক বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন গিয়ে বাধা দেন। পরে তাকে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে পর্যায়ক্রমে সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়।
বনভূমিতে নির্মিত নতুন স্থাপনার মধ্যে রয়েছে জেনারেটরের পাকা রুম, মাটি খনন করে কারখানার নির্গত পানি জমা রাখার বড় হাউজ, এক স্থাপনা থেকে আরেক স্থাপনায় চলাচলের জন্য দুটি ইটের সলিং রাস্তা, পশ্চিম পাশে শতাধিক ফুট দৈর্ঘ্যের পাঁচ ফুট উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল ও দক্ষিণে লোহার বেষ্টনী। কাটা হয়েছে সেগুনসহ কিছু গাছ।
গ্লোবাল ফিটের এসব কর্মকাণ্ড চলেছে এক বছর ধরে। এর ফলে নতুন করে প্রায় আধা বিঘা বনভূমি গ্রাস হয়েছে। বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রচার রয়েছে।
বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন এখন চট্টগ্রাম বন বিভাগে কর্মরত আছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ছেলে জাকির হোসেন জুমন সিন্ডিকেটের সদস্য। তার দাপটে খোদ বিভাগীয় বন কর্মকর্তারাও নমনীয় ছিলেন।
আলোচিত মোনায়েম হোসেন ওই জুমনের আশীর্বাদে গাজীপুরে অবাধে বড় বড় দুর্নীতি করেছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। তার আমন্ত্রণে মন্ত্রীপুত্রও চলে আসতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জুমনরা দুর্নীতি দমন কমিশনের তালিকায় পড়লেও মোনায়েম হোসেন রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গ্লোবাল ফিটের বিষয়টির ওপর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ঘটনার আড়ালে-তে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে তোলপাড়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত ও মাপজোখ করা হলেও শেষে তা থেমে যায়।
এদিকে গত বছরের জুনে বনভূমিতে ক্যানটিন নির্মাণের কাজ শুরু করে গ্লোবাল ফিট। খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম সামসুদ্দিন গিয়ে কাজ বন্ধ করে নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এ সময় মোনায়েম হোসেনের আমলে নির্মিত একটি রাস্তার ইটও অপসারণ করা হয়। প্রায় ১৫ শতাংশ বনভূমিতে রোপণ করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির চারা।
এ ঘটনায় বিট কর্মকর্তা জড়িতদের বিরুদ্ধে দুটি পিওআর মামলা দায়ের করেন। এর আগে গত বছরের মার্চে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে উচ্ছেদ মোকদ্দমাও দাখিল করে বন বিভাগ।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, গ্লোবাল ফিট তথা ডা. ইকবালের দখলকৃত বনভূমি উচ্ছেদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ চাইলেই দ্রুত অভিযান চালানো যাবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের দখল থেকে বনভূমি উদ্ধার না হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে তাদেরকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।
আরও পড়ুন : গাজীপুরে বন কেটে কারখানার স্থাপনা, ফরেস্টার মোনায়েমের বাণিজ্য ১৬ লাখ!