গাজীপুরের মনিপুর বিটের ‘৫ জনকে বদলির পরও’ বন দখল থামছে না!

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের মনিপুর বিটে বনভূমি দখল যেন থামছেই না। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা বন বিভাগের অধীন রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের এই দখলপ্রবণ বিটের বাণিজ্য নিয়ে ইতিমধ্যে ঘটনার আড়ালে-তে কয়েকটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সম্প্রতি বিট কর্মকর্তা ওয়ালিদ বিন মতিন ও চার বনকর্মীকে বদলি করা হয়েছে। নতুন বিট কর্মকর্তা আবদুল মান্নান যোগদান করেছেন। এরপরও দখল অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, বেগমপুর হোতাপাড়া এলাকার ইএসবিএল গার্মেন্টসের দক্ষিণ পাশে সিএস ৫৯৮ নং দাগের জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত। সেখানে প্রায় আধা বিঘা বনভূমি দখল করে বয়লার হাউজ নির্মাণের জন্য পার্শ্ববর্তী পলমল গার্মেন্টসের কাছে ভাড়া দেন স্থানীয় রুকন উদ্দিন।

গাছ কেটে পলমল গার্মেন্টসের বয়লার হাউজ নির্মাণের চেষ্টা

পরে মাটি খনন করে পিলারের কাজ শুরু হয়। কেটে ফেলা হয় চারটি তালগাছ। ঘটনাটি জানাজানি হলে বিট অফিসের লোকজন ঘটনাস্থল থেকে পলমল গার্মেন্টসের এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেন।

অভিযুক্তরা নির্মাণ কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছেন। এখন বিট অফিসের সঙ্গে আপসের জন্য জোর তৎপরতা চলছে।

একই দাগে ফাউন্ডেশন বাড়ি, টাইলস মার্কেট ও গোডাউনসহ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেছেন বেলায়েত হোসেন ওরফে বেলায়েত ডাক্তার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এসব করলেও তার কিছুই হয়নি।

বেলায়েত ডাক্তার ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ইএসবিএল গার্মেন্টসের পেছনে ১২ রুমের পাকা বাড়ি করে ভাড়া দিয়েছেন। এখন মাটি খনন করে হাউজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

বিট অফিস জানায়, ওই দাগটি পার্ট। তবে রুকন উদ্দিন ও বেলায়েত হোসেনের কোন ডিমারকেশন নেই। সেখানকার জমি নিয়ে বন বিভাগের পক্ষে গাজীপুর দেওয়ানি আদালতে রেকর্ড সংশোধনীর মামলাও রয়েছে।

হোতাপাড়া অটোস্ট্যান্ডের পশ্চিমে মনিপুর সড়কের উত্তরে আরজ আলীর বাড়ির পাশে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন এক প্রবাসী। বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে কিছু বনভূমি দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক ব্যক্তি বনায়নের গাছ নষ্ট করে তৈরি করেছেন রাস্তা। তাদেরকে জসিম নামের একজন সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে।

ডিমারকেশন ছাড়াই বন ঘেঁষে প্রবাসীর নির্মাণাধীন বাড়ি

মনিপুর থেকে ফরিদ মার্কেট রাস্তার কালভার্টের একটু সামনে সম্প্রতি বনভূমি দখল করে ছয় রুমের টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করেছেন নাসির। তার বাড়ির দক্ষিণ পাশে বনভূমিতে পাঁচ রুমের টিনশেড বাড়ির কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছেন সোহাগ। এ জন্য তারা আকাশমনি বাগানের গাছপালাও কেটেছেন।

বনভূমিতে নবনির্মিত খলিল মোল্লার বাড়ি

নাসিরের বাড়ির পশ্চিম পাশে সাত শতাংশ বনভূমি দখল করে পাঁচ রুমের একটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন খলিল মোল্লা। তার বাড়ির পাশে বনভূমিতে একজন বারান্দাসহ দুই রুমের পাকা বাড়ি করছেন।

বনভূমিতে খলিল মোল্লার বাড়ির পাশে নির্মাণাধীন বাড়ি

একই স্থানে প্রায় ১০ শতাংশ বনভূমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন শফিকুল। তার বাড়ির পাশে বনভূমিতে পাঁচ রুমের টিনশেড বাড়ি করেছেন রফিকুল।

নয়াপাড়া এলাকার আবু তালেব একজন চিহ্নিত বনদস্যু। তার বিরুদ্ধে বন মামলা আছে। ৫ আগস্টের পর তিনি কেমিকন কারখানার পূর্ব পাশে বনভূমিতে নির্মিত তার দোকানপাটের পেছনে আরও বনভূমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে রক্ষকরা বনভূমি বেহাতের সুযোগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে বোকরান মনিপুর মৌজার বনাঞ্চল রক্ষা করা কঠিন হবে।

এ ব্যাপারে মনিপুর বিট কর্মকর্তা আবদুল মান্নান ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, তিনি দুই সপ্তাহ আগে এসেছেন। এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করে চালান দেওয়া হয়েছে। যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযানের চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের মনিপুর বিটে গাছ কেটে বন উজাড়, ‘আপস দখল’ জমজমাট

আরও খবর

Back to top button