গাজীপুরে সাব-রেজিস্ট্রার বাতেনের ঘুষ বাণিজ্য রমরমা

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুর সদর ও যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুর্নীতি ঝেঁকে বসেছে। ঘুষ ছাড়া মিলছে না সেবা। প্রতি মাসে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকার বাণিজ্য।

দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গত ১৬ এপ্রিল কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে অফিসটিতে হানা দিলেও দৌরাত্ম্য থামেনি। ফলে জনসাধারণের হয়রানি ও ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত ছিলেন। গাজীপুরে যোগদান করেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও বুঝে নেন। চাপিয়ে দেন ঘুষের নতুন রেট। এ নিয়ে দলিল লিখকদের মধ্যে দেখা দেয় চাপা ক্ষোভ।

গাজীপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিস জেলার রেজিস্ট্রি অফিসগুলোর মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে জমিজমার দলিল রেজিস্ট্রিসহ নানা কাজ বেশি হওয়ায় সরকারি কোষাগারে জমা হয় মোটা অঙ্কের রাজস্ব। সাব-রেজিস্ট্রার সেবামুখী না হলে দলিল রেজিস্ট্রি কমে গিয়ে রাজস্বেও ভাটা পড়ে।

গাজীপুর সদর ও যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন বিভিন্ন শ্রেণির দলিলে পৃথক ঘুষের রেট নির্ধারণ করেছেন। তিনি রেট অনুযায়ী টাকা পেলে হাসিমুখে কাজ করেন। আর টাকা না পেলে নানা কারণ দেখিয়ে দলিল ফেরত দেন।

সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন দলিল দাতা বা গ্রহীতার আয়কর সংক্রান্ত টিআইএন বা টিনের রিটার্ন না থাকলে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেন। হেবা দলিলে জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা ও ১০ শতাংশের বেশি হলে ২০-৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। বিভিন্ন কোম্পানির ব্যাংক মর্টগেজ দলিলে ঋণের পরিমাণ অনুযায়ী নেন এক লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। বণ্টননামা দলিলে ৫০ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। ভুল সংশোধন ও ঘোষণাপত্র দলিলে নেওয়া হয় ১০-৫০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া কমিশনিং দলিলের ক্ষেত্রে বায়না, হেবা ও পাওয়ার অব অ্যাটর্নিতে ১০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। ভুল সংশোধন ও ঘোষণাপত্র দলিলে নেওয়া হয় ২০-৫০ হাজার টাকা। ঢাকায় হলে সরকারি ফির নামে ১২ হাজার টাকা ও স্থানীয়ভাবে ৯ হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ প্রকৃত সরকারি ফি আদায়কৃত ফির অনেক কম।

সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন এসব ঘুষের টাকা বুঝে নেওয়ার জন্য তিনজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা হলেন নকলনবিশ সোহেল রানা, হুমায়ুন ও উমেদার মিন্টু। সুযোগ পেয়ে এই কর্মচারীরাও ফুলেফেঁপে উঠছেন।

দলিল লিখকরা জানান, সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের আমলে অফিসটিতে টিন বাণিজ্যের প্রচলন শুরু হয়। পরে সাব-রেজিস্ট্রার মো. মাসুমের সময়ে তা বন্ধ ছিল। সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন আসার পর এই বাণিজ্য আবার চালু হয়।

দলিল লিখকরা আরও জানান, সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেন ঘুষের রেট বাড়ানোর কারণে জমির ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন। অনেকে দলিল রেজিস্ট্রি করছেন না। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন।

এদিকে গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদক হানা দেওয়ার পর সেবাপ্রার্থীরা পরিবর্তনের প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরই তা অনেকটা দুরাশায় পরিণত হয়। সাব-রেজিস্ট্রার বাণিজ্য বহাল রেখে ‘দুদক কোন সমস্যা নয়’ বলে প্রচার দিচ্ছেন।

এ ব্যাপারে আলোচিত সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল বাতেনের সঙ্গে মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker