গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়, আটক গাড়ি ছাড়লেন রেঞ্জার-ফরেস্টার!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান কোর জোনভুক্ত সংরক্ষিত এলাকা। উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষায় রয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনা।
কিন্তু এই পার্ক ঘিরেই চলছে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। পার্ক ঘেঁষে দীর্ঘদিন ধরে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। আর সেসবে থাকা উচ্ছিষ্ট খেয়ে বানরসহ অন্যান্য প্রাণী রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে উৎকট গন্ধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ময়লার ঠিকাদার সোহেল রানা টমটমযোগে নিয়মিত পার্কের ৬ নম্বর গেটের উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাড়কের পাশে বর্জ্য ফেলেন। অন্যান্য স্থান থেকেও ময়লা এনে ফেলা হয়। পার্ক বিট অফিস তাদেরকে এই সুযোগ দিয়েছে। বিনিময়ে ঠিকাদাররা মাসে ১০ হাজার টাকা করে দেন।
গত ২২ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মোজাম্মেল হোসেন একটি ময়লার গাড়ি দেখে আটক করেন। পরে তিনি পার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর আরেকটি ময়লার গাড়ি আটক করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা। দুটি গাড়িই ঠিকাদার সোহেলের। পরে সোহেল গাড়ি ছাড়িয়ে নেওয়ার তদবির শুরু করেন।
অবশেষে তিনি সফল হন। এক সপ্তাহ পর গত ৩০ এপ্রিল রাতে পার্ক রেঞ্জের ক্যানটিনের পাশে রাখা গাড়ি দুটি ছেড়ে দেওয়া হয়। কারও বিরুদ্ধে কোন মামলা করা হয়নি।
ছেড়ে দেওয়ার আগে ময়লা বহনকারী ঠিকাদার সোহেলের গাড়ি দুটি পার্কের ভেতরে রাখা হয়
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঠিকাদার সোহেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে লেনদেন করে গাড়ি ছাড়িয়ে নিয়েছেন। প্রশ্ন এড়াতে অফিসে একটি মুচলেকা রাখা হয়েছে। বিট অফিসের পরামর্শে ঠিকাদাররা এখন গভীর রাতে ময়লা ফেলছেন।
সূত্র আরও জানায়, ছেড়ে দেওয়া গাড়ি দুটিতে থাকা বর্জ্যও পার্কের গভীরে নিয়ে খালাস করা হয়েছে। এতে বোটম্যান কবির হোসেন সহযোগিতা করেছেন। কবির হোসেন খুলনা থেকে ডেপুটেশনে এসে প্রায় ১৫ বছর ধরে পার্কে আছেন। তার বিরুদ্ধে গাছ পাচারে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে পার্ক রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হক ও পার্ক বিট কর্মকর্তা শাহান শাহ আকন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মোবাইলে কথা বলতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে ঠিকাদার সোহেল রানা লেনদেন অস্বীকার করে ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, তিনি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করে গাড়ি ও লোক ছাড়িয়ে নিয়েছেন। তার গাড়ি আগেও আটক করা হয়েছিল। এখন থেকে সেখানে আর ময়লা ফেলবেন না।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, ন্যাশনাল পার্ক এলাকায় বর্জ্য ফেলায় প্রাণীদের স্বাস্থ্যগত ও মৃত্যুর ঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক পরিবেশগত দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। এটা বন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হাতেনাতে আটকের পরও গাড়ি ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।