গাজীপুরের ‘কোর জোনভুক্ত’ বিকেবাড়ি বিটে গাছ কেটে দেদারসে স্থাপনা নির্মাণ

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরে গাছ কেটে উজাড় করা হচ্ছে সংরক্ষিত বন। অবাধে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়িঘর।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জের বিকেবাড়ি বিটে গত তিন মাস ধরে এসব তাণ্ডব চলছে। দখল প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সরেজমিনে জানা যায়, বিকেবাড়ি বিটের ডগরী মৌজার বড়চালা এলাকায় দীর্ঘদিন আগে আকাশমনি বাগান সৃজন করে বিট অফিস। রক্ষণাবেক্ষণ পেয়ে গাছগুলো বড় হয়ে ওঠে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও বন্যপ্রাণীর জন্য বনাঞ্চলটি অন্যতম নিয়ামকে পরিণত হয়।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে একশ্রেণির লোক বনভূমি দখলে মেতে ওঠেন। জেলার অন্যান্য রেঞ্জের মতো ভাওয়াল রেঞ্জের ‘কোর জোনভুক্ত’ বিকেবাড়ি বিটেও তা ছড়িয়ে পড়ে।
বিটের বড়চালা এলাকায় গত তিন মাসে আকাশমনি ও অন্যান্য প্রজাতির বড় বড় শতাধিক গাছ কেটে বন উজাড় করা হয়েছে। সেখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাড়িঘর। দেওয়া হচ্ছে ভাড়া।

বড়চালায় বনভূমিতে নবনির্মিত রুহুল আমিনের বাড়ি


৫ আগস্টের পর এলাকাটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন গাছ কেটে ও বনভূমি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। এতে বেহাত হয়েছে অন্তত পাঁচ বিঘা বনভূমি।
তাদের মধ্যে তাজউদ্দিন চারটি আকাশমনি গাছ কেটে তিন রুমের বাড়ি নির্মাণ করেছেন। মেহগনি ও জলপাই গাছ কেটে হাবিব করেছেন তিন রুমের বাড়ি।

বড়চালায় বনভূমিতে নবনির্মিত হাবিবের বাড়ি


বনভূমিতে নূর ইসলামের আগে থেকেই চার রুমের একটি বাড়ি আছে। এবার সুযোগ পেয়ে তিনি বসে থাকেননি। তিন রুমের আরেকটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
সাজিদ আকাশমনি, তেঁতুল ও আমগাছ কেটে ছয় কাঠা বনভূমি দখল করেছেন। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে চার রুমের বাড়ি।
আম ও কাঁঠাল গাছ কেটে চার কাঠা বনভূমি দখলে নিয়েছেন উজ্জ্বল। নির্মাণ করেছেন ৫০ হাত দৈর্ঘ্যরে গরুর খামার।
রুমি সিকদার আমগাছ কেটে চার কাঠা বনভূমি দখল করেছেন। নির্মাণ করা হয়েছে তিন রুমের বাড়ি।
আকাশমনি ও কাঁঠাল গাছ কেটে চার কাঠা বনভূমি দখলে নিয়েছেন কালাম। নির্মাণ করেছেন তিন রুমের বাড়ি।
শফি আমগাছ কেটে চার কাঠা বনভূমি দখল করে দুটি রুম নির্মাণ করেছেন। শহীদুল তালগাছ কেটে তিন কাঠা বনভূমিতে করেছেন তিন রুমের বাড়ি।
কদম গাছ কেটে তিন কাঠা বনভূমি দখলে নিয়ে তিন রুমের বাড়ি নির্মাণ করেছেন বাবুল। শেখ ফরিদ আমগাছ কেটে চার কাঠা বনভূমি দখলে নিয়ে করেছেন দুটি রুম।
এ ছাড়া রফিক আকাশমনি, জলপাই ও নিমগাছ কেটে তিন কাঠা বনভূমি দখল করেছেন। নির্মাণ করা হয়েছে দুটি রুম।


এলাকাবাসী জানান, বিট অফিস থেকে চাপ দেওয়ার পর নতুন বাড়িপ্রতি ১০-১৫ হাজার টাকা ও পুরনো বাড়িপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকা তোলা হয়েছে। টাকা তুলছেন হাসান মিস্ত্রি, ইসমাইল, হাবিব ও হান্নান।
এ ব্যাপারে বিকেবাড়ি বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মোল্লা ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, আমরা ছাড় দেব না। ইতিমধ্যে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের চেষ্টা চলছে।

আরও খবর

Back to top button