গাজীপুরে ‘বনখেকো’ বাংলাদেশ মেইজ প্রোডাক্টসের নতুন ৪ তলা ভবন নির্মাণের তোড়জোড়
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা এলাকায় সাড়ে পাঁচ বিঘা বনভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ মেইজ প্রোডাক্টস লিমিটেড। এখন চলছে সম্প্রসারণ কার্যক্রম।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিটের এই জবর দখলকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী বাংলাদেশ মেইজ প্রোডাক্টস বানিয়ারচালা এলাকায় গত দুই যুগ আগে গড়ে ওঠে। এর বর্তমান মালিক ইতালি প্রবাসী মোহাম্মদ আলী। কারখানার স্থাপনা নির্মাণের সময় মাহনা ভবানীপুর মৌজার সিএস ৮২২ ও আরএস ২৮৩১ নং দাগের ১ একর ৮০ শতাংশ এবং সিএস ১৪৫৮ ও আরএস ২৮০৬ নং দাগের ৫ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমি দখল করা হয়। যার স্থানীয় বাজারমূল্য অন্তত সাড়ে সাত কোটি টাকা।
বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে দখলকৃত বনভূমিতে রয়েছে পাকা ভবন। কারখানাটির টয়লেটের বর্জ্যও বনভূমির মধ্য দিয়ে খননকৃত নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অদূরে প্রাকৃতিক জলাশয়ে নির্গত হচ্ছে।
কারখানার মালিক গত বছরের শেষ দিকে নতুন করে সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে থাকা বনভূমি ঘেঁষে প্রায় আধা বিঘা জোত জমিতে চার তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
বন কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ মেইজ প্রোডাক্টস পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত জবর দখলকারী প্রতিষ্ঠান। যৌথ ডিমারকেশন ছাড়া সেখানে স্থাপনা নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। আর ডিমারকেশন অনুমোদনের পূর্বশর্ত হল দখলকৃত বনভূমি ছেড়ে দেওয়া।
ডিমারকেশন ছাড়াই কারখানাটির নতুন ভবন নির্মাণের তথ্য পেয়ে গত ২৫ ডিসেম্বর বিষয়টি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানাকে জানানো হয়। পরে তিনি বিট কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলে বেআইনি কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মালিক দখলকৃত বনভূমি ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাই ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের পর তার লোকজন এক দালাল সাংবাদিকের দ্বারস্থ হন। ওই সাংবাদিক টাকা নিয়ে ‘বলে দিয়েছি, আর সমস্যা হবে না’ বলে কাজ শুরু করতে বলেন। পরে গত ঈদের আগ মুহূর্তে গ্রাউন্ড ফ্লোরের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করা হয়।
এ ব্যাপারে কারখানার ম্যানেজার ওয়ায়েজ আহমেদ ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, কারখানার মূল চার তলা ভবন গেজেটভুক্ত বনভূমিতে পড়েছে। বর্তমান স্থাপনা নিজস্ব জমিতে করা হচ্ছে। আবেদন করলেও ডিমারকেশন হয়নি। সরকার যদি কখনো উচ্ছেদ করে তখন তো কিছু করার নেই।
একজন বন কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে বনভূমি দখলকারীরা নানা কৌশলে যুগের পর যুগ দখল ধরে রেখেছেন। তাই বনভূমি উদ্ধার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোথাও ডিমারকেশন ছাড়া যাতে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না হয়, সেদিকে যথাযথ নজরদারি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।