জয়দেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষক লতা এখনো বহাল তবিয়তে!

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক বদরুন নেছা লতা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যালয়টিতে বদরুন নেছা লতার একক আধিপত্য চলছে প্রায় দেড় যুগ ধরে। আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে তিনি স্বেচ্ছাচারিতার ষোল কলা পূর্ণ করেন।

বিষয়টির ওপর গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘটনার আড়ালে-তে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে তোলপাড়।

পরে তদন্তের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত দুই মাসেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে অভিভাবক মহলে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ সংলগ্ন জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। দুটি শিফটে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭০০। এর মধ্যে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রী বেশি।

তাদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিধি বহির্ভূতভাবে সেশন ফি, ক্লাস পার্টি, স্কুল ড্রেসের মনোগ্রাম, পরীক্ষার খাতা, সাজেশন শিট, মার্কশিট ও কাজের বুয়ার ফি বাবদ বিভিন্ন হারে টাকা আদায় করা হতো। আদায়কৃত লাখ লাখ টাকার বড় অংশ হাতিয়ে নিতেন প্রধান শিক্ষক বদরুন নেছা লতা।

আলোচিত বদরুন নেছা লতার পৈতৃক বাড়ি নগরীর কাথোরা গ্রামে। তিনি প্রথমে জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। পরে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়ে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০০৭ সালে বদলি হয়ে জয়দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসেন।

বদরুন নেছা লতা বিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও জড়িয়ে পড়েন। শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গড়ে তুলেন সখ্যতা। সেই সখ্যতার পুরস্কার হিসেবে জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান হন।

অথচ চাকরি বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি চাকরিজীবী এভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে থাকতে পারেন না। এর ফলে দুই বছর ব্যাপক ক্লাস ফাঁকি ও শিক্ষার মানোন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বদরুন নেছা লতার দৌরাত্ম্য বন্ধ হচ্ছিল না। গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হয়। এ ছাড়া তিনি অভিভাবক সভা ডেকে নতুন ভবনের রেলিংয়ের ওপরে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপনের কথা বলে লক্ষাধিক টাকা তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য কিছু অভিভাবক টাকা দিয়েছেন। ঘটনার আড়ালে-তে প্রতিবেদন প্রকাশের পর আর টাকা তোলা হয়নি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফি আদায়ও বন্ধ রয়েছে। তবে সুযোগ বুঝে বাণিজ্য আবার শুরু হতে পারে।

জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ভূঁইয়া ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন পাননি।

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বদরুন নেছা লতাকে রক্ষার উদ্দেশে তদন্তে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। নেপথ্যে লেনদেনের কথাও শোনা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : জয়দেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘আওয়ামী দাপটে’ প্রধান শিক্ষক লতার বেপরোয়া দুর্নীতি!

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker