গাজীপুরের মনিপুর বিটে থেমে থেমে দখল বাণিজ্য, উচ্ছেদে অনীহা!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের মনিপুর বিটে দখল বাণিজ্য থামছে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর না হওয়ায় লোভী বন কর্মকর্তারা ফায়দা লুটছেন।
ঢাকা বন বিভাগের মধ্যে মনিপুর বিট অন্যতম দখলপ্রবণ বিট হিসেবে চিহ্নিত। অধিকাংশ দখলের ঘটনায় বিট অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ থাকে। তাই প্রতিরোধ বা উচ্ছেদে তাদের তৎপরতা বেশ কম।
মনিপুর বিটের দখল বাণিজ্য নিয়ে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ঘটনার আড়ালের প্রথম পৃষ্ঠায় একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে ব্যাপক তোলপাড়।
পরে রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানা প্রতিবেদনে উল্লেখিত স্পটে অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতার করে বন আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। কয়েকজন দখলকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। কিন্তু গত ছয় মাসেও স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি।
এই সুযোগে বিটের বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে মূল্যবান বনভূমি দখল হচ্ছে। আর এসবে লেনদেন হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মনিপুর উত্তরপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অল্প উত্তরে সলিমুল্লাহ ওরফে সলিম বনভূমি দখল করে টিনশেডের ভেতরে পাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন। সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে চারদিকে প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে।
মনিপুর উত্তরপাড়ায় টিনশেডের ভেতরে সলিমের নির্মাণাধীন পাকা বাড়ি
সলিমের বাড়ির অল্প পশ্চিমে বনভূমি দখল করে সম্প্রতি টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার। বাড়িটির ভিটি পাকা। স্থাপনা পুরনো বোঝাতে রঙিন টিন ব্যবহার করা হয়েছে।
নয়াপাড়া এলাকার ফকির মার্কেটের পাশে আকাশমনি বাগানের অংশ দখল করে আবদুর রহমান সম্প্রতি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এই বাড়িও পুরনো বোঝাতে চালায় রঙিন টিন ও চারপাশে পুরনো টিন ব্যবহার করা হয়েছে।
নয়াপাড়ার বকুল শেখের মেয়ে সাদিয়া ইতিপূর্বে জোত জমিতে একটি বড় গোডাউন নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। গোডাউনটিতে মালবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য দক্ষিণ পাশের আকাশমনি বাগানের গাছ কেটে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তা করা হয়েছে।
মনিপুর খাসপাড়া এলাকার কবরস্থানের পশ্চিম পাশে দখলকারী আকবর আলীর কাছ থেকে ছয় মাস আগে ছয় শতাংশ বনভূমি কিনেন স্থানীয় আলাউদ্দিন। পরে তিনি সেখানে দুটি প্লট করেন। একটি প্লটে টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করে সাইদুর রহমানের কাছে চার লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়।
তিন মাস আগে আকাশমনি বাগানের কয়েকটি গাছ কেটে অপর প্লটে টিনশেড বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন আলাউদ্দিন। খবর পেয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা গিয়ে বাধা দেন। কয়েক দিন পর বিট অফিসের সহযোগিতায় কাজ সম্পন্ন করে বাড়িটি হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর কাছে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়।
একাধিক দখলকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বিট অফিসের অনুমতি নিয়ে বনের জমিতে বাড়িঘর করেছেন। স্থাপনাভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়া হয়। অফিসের পক্ষে বনপ্রহরী মোবারক হোসেন, বাগান মালি আমির হোসেন ও রঞ্জন কুমার টাকা বুঝে নেন। দু-একজন সাংবাদিকও ওপরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কথা বলে বিটে দালালি করেন।
অভিযুক্ত বনকর্মীদের মধ্যে আমির হোসেনকে প্রায় দেড় বছর আগে কালিয়াকৈর রেঞ্জের সাভার বিটে বদলির আদেশ হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তাকে রিলিজ দেওয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের মনিপুর বিটে দেদারসে বনভূমি দখল, হচ্ছে না উচ্ছেদ