গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে দালালরা আবার ফিরছে, বাণিজ্য বাড়ছে

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে উমেদার নামধারী দালালরা আবার ফিরতে শুরু করেছে।

জমির খাজনা-খারিজ বাবদ জনসাধারণের কাছ থেকে নানা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীন এই অফিসটিতে দীর্ঘদিন ধরে অন্তত ২০ জন উমেদারের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন হচ্ছিল।

বিষয়টির ওপর গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চলে তোলপাড়।

পরে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান ৪ অক্টোবর আকস্মিক অভিযানে গিয়ে চার দালালকে আটকের নির্দেশ দেন। বাকিরা পূর্ব পাশের ছোট গেট দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এরপর আটককৃতরা ‘ভবিষ্যতে আর দালালি করবে না’ মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায়। কিন্তু অন্য কয়েকজন দালালির হাল ছাড়েননি।

আরও পড়ুন : গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে ডিসির অভিযান, ৪ দালাল ধরা

তাদের মধ্যে ঝাড়ুদার পরিচয়ধারী শরীফ অভিযানের কিছুদিন পরই বহাল হন। তিনি অফিসের ভেতরে সরকারি কর্মচারীর মত খারিজের চুক্তিসহ নানা কাজ করেন।

মাসুম ও নূরুন্নবী কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে বহাল রয়েছেন। নতুন যুক্ত হয়েছেন আল-আমিন। তাদেরকে টাকা দিলে মূল জোতের খাজনা বেশ কমে যায়। তারা খারিজের চুক্তিও করেন।

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, যাদের মূল জোতের বকেয়া খাজনার পরিমাণ বেশি, তারা ওই অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আবাসিক শ্রেণিকে চালা বা নালা দেখিয়ে নামমাত্র টাকার রসিদ দেওয়া হয়। যেমন ১০ হাজার টাকার খাজনায় পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে ২০০-৩০০ টাকার রসিদ প্রদান। এর ফলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, কম্পিউটার অপারেটররা এভাবে কারসাজি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অ্যাকাউন্ট থেকে খাজনা আদায়ের তালিকা ধরে যাচাই করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।

এ ছাড়া আলোচিত দালাল ধীরাশ্রম এলাকার বিল্লাল ভূমি অফিসের পশ্চিম পাশের কাজী সুপার মার্কেটের নিচ তলায় একটি দোকান ভাড়া নিয়েছেন।

‘বাইতুল্লাহ কম্পিউটার’ নামের দোকানটিতে অনলাইনে জমির নামজারি ও জমাভাগের আবেদন এবং খাজনা পরিশোধের আড়ালে দালালি ব্যবসা জমে উঠেছে।

বিল্লাল খারিজের চুক্তি অনুযায়ী ফাইল তৈরি করে অফিস সময় শেষে ভেতরে গিয়ে বুঝিয়ে দেন। তার পাশে একইভাবে ব্যবসা করছেন বালুচাকলীর সোহেল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকের অভিযান ও ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তারকে শাস্তিমূলক বদলির পর পৌর ভূমি অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য অনেক কমেছিল। তখন অনেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা ঘুষের রেট বহাল রাখায় কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না।

এখনো সাধারণ খারিজ থেকে খারিজে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দুই হাজার টাকা, ৪০ শতাংশের ওপরে চার হাজার টাকা, মূল জমি থেকে খারিজে চুক্তি অনুযায়ী এবং অর্পিত সম্পত্তির অবমুক্ত হওয়া ‘খ’ তফসিলভুক্ত জমির খারিজে আট হাজার টাকা করে দিতে হয়। আবেদনকারীদের সঙ্গে কথা বললেই দালাল ও লেনদেনের বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

এসিল্যান্ড অফিস সূত্র জানায়, পৌর ভূমি অফিস থেকে মাসে প্রায় ৩০০ খারিজের প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে কিছু থাকে ব্যক্তি বিশেষের। বাকিগুলো থেকে দুই অফিস মিলিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বাণিজ্য হয়।

এ ব্যাপারে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শচীন্দ্র কুমার রাজবংশী আলোকিত নিউজকে বলেন, দালালরা বাইরে থেকে কাজ করলে নজরদারি করা যায় না। বিল্লালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি অফিসে দেখি না।

খাজনায় কারসাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কম্পিউটার অপারেটররা তো সরকারি নয়, এ রকম হলে দায় আমারই। আপনি বলেছেন, আমি দেখব।

আরও পড়ুন : গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসের ‘ঘুষখোর’ নায়েব খাদিজাকে বদলি

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker