শ্রীপুর সরকারি কলেজে কোচিং বাণিজ্য, ৬ লাখ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোচিং ফির নামে ছয় লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এইচএসসির নির্বাচনী পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীর ফলাফল খারাপ হয়। কেউ এক বিষয়ে ও কেউ কেউ দুটি বা তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। পরে তাদের জন্য বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
৩০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিনা রসিদে প্রতি বিষয়ে এক হাজার টাকা করে ফি আদায় করা হয়। কোচিং পরীক্ষার নামেও শিক্ষার্থীপ্রতি নেওয়া হয় ২০০-৩০০ টাকা। এভাবে আনুমানিক ছয় লাখ টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, কোচিংয়ে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইংরেজি, আইসিটি ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো হয়েছে। কোচিং ফি ছাড়া অনুত্তীর্ণ কাউকে ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
অভিভাবকরা বলছেন, সরকারি কলেজে কোচিং চালানোর কোন সুযোগ নেই। কর্তৃপক্ষ চাইলে বিধি মোতাবেক অল্প ফি নিয়ে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারে। প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ ও প্রভাষক মো. অলিউল্লাহর নেতৃত্বে চার-পাঁচজন শিক্ষক বিনা রসিদে ওই কোচিং ও পরীক্ষার ফি আদায় করেছেন। অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৫ এপ্রিল অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। খবর পেয়ে অভিযুক্তরাও দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
এ ব্যাপারে প্রভাষক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি। প্রভাষক মো. অলিউল্লাহ বিধি মোতাবেক সব করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
অপরদিকে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অন্যান্য ফির সঙ্গে পরীক্ষা ফি বাবদ ২৮০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। ভর্তির ছয় মাস না যেতেই গত ফেব্রুয়ারিতে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার নামে আবারও ২৮০ টাকা করে আদায় করা হয়। যার পরিমাণ পৌনে দুই লাখ টাকা। পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন প্রভাষক নূরুজ্জামান। এ ঘটনায়ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ ২০২৩ সালের মার্চে পুরো জাতীয়করণের আওতায় আসে। এরপর থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনসহ অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ বিধি বহির্ভূতভাবে বিনা রসিদে কোচিং ও একাধিকবার পরীক্ষার নামে ফি আদায় করা হয়। ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে বিনা রসিদে ফি আদায় করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, কলেজটির অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক পিয়ারা নার্গিস ২০২৩ সালের অক্টোবরে যোগদান করেন। এর আগে তিনি কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রধান ছিলেন। তার অনিয়ম ও অদক্ষতায় কলেজের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।
বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ পিয়ারা নার্গিসের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।