গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটে দখল বাণিজ্য, বন উজাড়

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট এলাকায় বনভূমি দখল করে বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। যোগসাজশ থাকায় রক্ষকরা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, কিছু স্থাপনা দ্রুত ও কিছু স্থাপনা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এড়াতে বিট অফিস কৌশলে বনভূমি দখলের সুযোগ দিচ্ছে। দখলদারদের কাছ থেকে টাকাও ধাপে ধাপে নেওয়া হচ্ছে।

ইজ্জতপুর এলাকার পুরাতন কবরস্থানের পাশে প্রায় পাঁচ গন্ডা সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে বারান্দাসহ পাকা তিন রুমের বাড়ি করেছেন ফল ব্যবসায়ী কদম আলী। গত রমজানের মাঝামাঝি সময়ে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

বাড়িটির কিছু কাজ এখনো বাকি। এই বাড়ি থেকে বিট অফিস প্রথমে ৫০ হাজার টাকা ও শেষে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে বলে অভিযোগ।

ইজ্জতপুর রেলক্রসিংয়ের পশ্চিম পাশে কাফিলাতলীতে প্রায় পাঁচ গন্ডা জমি দখল করে রঙিন টিন দিয়ে তিন রুমের বাড়ি নির্মাণ করেছেন সিরাজুল ইসলাম। সিরাজুল প্রথমে কাজ শুরু করলে রোজার ঈদের দুদিন পর বিট অফিসের লোকজন গিয়ে ভেঙে দেন। পরে গত জুনের শেষ দিকে আবার কাজ শুরু হয়ে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।

বেড়া দিয়ে বন দখল করে সিরাজুলের বাড়ি

স্থানীয়রা জানান, সিরাজুলের দখলকৃত জমির মধ্যে কিছু অংশ রেলওয়ের। বাকি অংশ বনভূমি। সেখানে সুফল প্রকল্পের রোপণকৃত চারাও ছিল। বিট অফিস দুই দফায় ৮০ হাজার টাকা নিয়ে বনের জমিকে রেলের জমি বলে চালিয়ে দিয়েছে। মাই টিভির এক সাংবাদিক এসব দখলে দালালি করেছেন।

ইজ্জতপুর স্কুলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ব্লক ইট তৈরির কারখানা স্থাপন করছেন ঢাকার শাহাদাত হোসেন। তার বৃহৎ প্রজেক্টের তিন পাশে বনভূমি। সেখানে মালবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য কয়েক মাস আগে বালু ফেলে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের রাস্তার কাজ শুরু হয়। রাস্তাটি নির্মাণে বনভূমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

নির্মাণাধীন ব্লক ইট কারখানার রাস্তা

ইজ্জতপুর বাজারের পূর্ব পাশে কাফিলাতলী মৌজার আরএস ৩৩ নং দাগের প্রায় ২০ শতাংশ বনভূমি দখল করে চার রুমের মাটির বাড়ি নির্মাণ ও বিভিন্ন গাছপালা রোপণ করেছিলেন সাইদুল ইসলাম। গত ডিসেম্বরে তিনি গাজীপুর শহরের ভোগড়া বাইপাস এলাকার মামুনের কাছে ১০ লাখ টাকায় সব বিক্রি করে দেন।

পরে মামুন আরসিসি খুঁটি পুঁতে রঙিন টিন দিয়ে বাউন্ডারি ও বারান্দা নির্মাণ করেন। একই সঙ্গে রুমগুলোর ভিটি পাকা করার পর এখন টাইলস স্থাপন ও রাজকীয় গেট নির্মাণের কাজ চলছে।

বনভূমিতে নির্মিত বাড়ি কিনে সাজসজ্জার কাজ

এই স্পট থেকে বিট অফিস এক লাখ টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ। বিল্লাল মাস্তান নামের এক দালাল মামুনকে বাড়ি কেনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করছেন। বাড়ির পূর্ব পাশ থেকে কিছু আকাশমনি, মেহগনি ও গজারি গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে।

মামুনের বাড়ির দক্ষিণে একই দাগের বনভূমিতে গত মে মাসে তিনটি টিনশেড রুম করে ভিটি পাকা করেছেন জহিরুল ইসলাম। জহিরুলের সৌদি প্রবাসী স্ত্রী দেশে আসার পর বিট অফিসে এক লাখ টাকা দিয়ে কাজের অনুমতি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

বাতেন ডাক্তারের বাড়ির পাশে কয়েক মাস আগে প্রায় ১৫ শতাংশ বনভূমি দখল করেছেন সৌদি প্রবাসী খাইরুল বাশার রিপনের স্ত্রী ইয়াসমিন। ওই জমিতে ২০২১ সালে বনায়ন করেছিল বিট অফিস। দখলের কারণে শতাধিক আকাশমনি চারা বিনষ্ট হয়েছে।

বিট অফিসের কাছে আলী হোসেনের বন দখল

এ ছাড়া রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট অফিসের দক্ষিণ পাশের খেলার মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন আলী হোসেন। বাড়িটির সামনের অংশে গজারি বন। ইট-বালু বনে স্তূপ করে রাখায় গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে। গেটের সামনে প্রায় এক শতাংশ বন দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা এ কে এম ফেরদৌসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

বিষয়টি নিয়ে রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা জুয়েল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিস্তারিত তথ্য দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button