শ্রীপুরে ২ সরকারি পুকুর ইজারা নিয়ে খননের নামে মাটি বিক্রির ধুম!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের শ্রীপুরে দুটি সরকারি পুকুর ইজারা নিয়ে খনন ও পাড় বাঁধাইয়ের নামে মাটি লুট করা হচ্ছে। প্রায় তিন মাস ধরে এই অপরাধ চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সামনে ইন্দ্রপুর বাজার। বাজারের দক্ষিণ দিকে ১ নং খতিয়ানভুক্ত খাস পুকুর দুটির অবস্থান। প্রথমটির আয়তন ৩ একরের অধিক ও মৌলভীচালার দ্বিতীয়টির আয়তন ৪ একর ৭৮ শতাংশ।
পুকুর পাড়ে একটি সাইনবোর্ড। তাতে প্রশাসনের অনুমতি সংক্রান্ত দুটি স্মারক নম্বর উল্লেখ করে পুকুরের মাটি খনন ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ চলছে লেখা রয়েছে। প্রথম পুকুরের মাটি খনন শেষ করে এখন দ্বিতীয়টিতে পুরোদমে শুরু হয়েছে।
পুকুর দুটিতে অপরিকল্পিতভাবে খনন কাজ চলছে। প্রথম পুকুরের কোথাও ২০ ফুট ও কোথাও ৩০ ফুট গভীর করা হয়েছে। পাড়ে নামমাত্র মাটি ফেলা হয়েছে। বাকি মাটি অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। দ্বিতীয় পুকুরের উত্তর পাড়ের গাছপালা ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রথম পুকুরের পাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ২০টি পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি পরিবারে শিশু আছে। পুকুরের গভীরতা বেশি হওয়ায় তারা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছেন।
ফাইজ উদ্দিন, নাজমা আক্তার, মাজেদা বেগম ও মেহেদী হাসানসহ বাসিন্দারা ঘটনার আড়ালে-কে জানান, সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসন থেকে একজন পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন যে মাছ চাষের জন্য চার ফুট খনন করে পুকুরের পাড় বাঁধাই করা হবে। কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। তারা প্রতিবাদ করলে উচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়।
ঝুঁকিতে পড়েছে পাড়ের গাছপালা
বাসিন্দারা আরও জানান, রাত আটটার পর থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়। একবার ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ গিয়ে মাটি ব্যবসায়ী কালামকে ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু ব্যবসা আর বন্ধ হয়নি। পত্রিকা ও টিভির অনেক সাংবাদিক এসেছিল, কেউ নিউজ করেনি।
সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, জাহিদ নামের দূরের এক ব্যক্তি পুকুর দুটি দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। মাটি ব্যবসায়ীরা তাকে ট্রাকপ্রতি ১১০০ টাকা দেন। দুটি পুকুর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে তিন হাজার ট্রাক মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। আরও কয়েক হাজার ট্রাক মাটি কাটা যাবে।
হিসাব করে দেখা গেছে, পুকুর দুটি থেকে মাটি বিক্রি করে জাহিদ প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অবশিষ্ট মাটি কাটা সম্পন্ন হলে তার ব্যবসা হবে কোটি টাকার ওপরে।
বর্তমানে দ্বিতীয় পুকুরে বানিয়ারচালা এলাকার সোলায়মান হোসেন সহযোগীদের নিয়ে ভেকু দিয়ে মাটি কাটছেন। চড়া দামে মাটি বিক্রি করে তিনিও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ইজারাদার জাহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। সোলায়মান হোসেন পুকুর থেকে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করার কথা ঘটনার আড়ালের কাছে স্বীকার করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।