সংসদ নির্বাচন : গাজীপুরে ছিটকে পড়ার ঝুঁকিতে ক্ষমতাবান একাধিক প্রার্থী

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোট আগামী ৭ জানুয়ারি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও জোরেশোরে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এবার স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াতে দলীয় বাধা না থাকায় সারা দেশের ন্যায় গাজীপুরের পাঁচটি আসনেও নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী খোদ আওয়ামী লীগ। এই কারণে নেতা-কর্মীদের একটি অংশ ছাড়াও সাধারণ ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে এমপি নির্বাচিত করার সুযোগ পাচ্ছেন।
ভোটাররা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে একাধিক আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ছিটকে পড়তে পারেন ক্ষমতায় থাকা একাধিক প্রার্থী।
গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সিটির একাংশ) : বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর শহরের বাসিন্দা হলেও তার নির্বাচনী এলাকা কালিয়াকৈর। তিনি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল। স্বতন্ত্র এই প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
আসনটিতে অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির আল আমিন, তৃণমূল বিএনপির চৌধুরী ইরাদ আহমদ সিদ্দিকী, আবদুল জব্বার সরকার, ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান, তরিকত ফেডারেশনের সফিকুল ইসলাম ও জাকের পার্টির মানিক সরকার।
গাজীপুর-২ (সদর ও টঙ্গী) : এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি গত বিএনপি সরকারের আমলে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে। বাবার উত্তরসূরি হিসেবে উপ-নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে তার সংসদে পদার্পণ।
আসনটিতে অন্য প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির জয়নাল আবেদীন, ইসলামী ফ্রন্টের আমির হোসাইন, জাকের পার্টির রিনা রহমান, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ আবু দাউদ মছনবী হায়দার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির কাজী হাসিবুর রহমান রাব্বী, সুপ্রিম পার্টির এস এম জাহাঙ্গীর আলম ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেহানা আক্তার রিনা।
গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের একাংশ) : এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী রহমত আলীর মেয়ে অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি। তিনি বর্তমানে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ। প্রবীণ রাজনীতিক রহমত আলীর অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
আসনটিতে অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এফ এম সাইফুল ইসলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুর রহমান, জাসদের জহিরুল হক মন্ডল বাচ্চু, জাকের পার্টির মো. আলাউদ্দিন, তরিকত ফেডারেশনের জয়নাল আবেদীন ও স্বতন্ত্র এ কে এম সাখাওয়াত হোসেন খান।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) : এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করলে ভাইয়ের আসনে ২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে পদার্পণ করেন বড় বোন রিমি।
এবার সিমিন হোসেন রিমির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার ফুফাতো ভাই ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা আলম আহমেদ। গত ৪ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপি হওয়ার কারণে এই শিল্পপতির মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা হয়।
তবে আলম আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ কাগজপত্র দাখিল করে আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলে ভোটের মাঠ চাঙা হবে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
আসনটিতে অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির সামসুদ্দিন খান, জাকের পার্টির জুয়েল কবির, বিএনএফের অ্যাডভোকেট সারোয়ার-ই-কায়নাত, সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবদুর রউফ খান ও স্বতন্ত্র সামসুল হক।
গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও গাজীপুর সদরের একাংশ) : এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি দুবার বর্তমান সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাবা শহীদ ময়েজ উদ্দিনের উত্তরসূরি হিসেবে রাজনীতিতে তার পদার্পণ।
আসনটিতে মেহের আফরোজ চুমকির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান। তিনি দুবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, জাসদের তরিকুল ইসলাম আকন্দ, ইসলামিক ফ্রন্টের আল আমিন দেওয়ান, জাকের পার্টির এ এন এম মনিরুজ্জামান, সুপ্রিম পার্টির উর্মি ও গণফোরামের সোহেল মিয়া।
উল্লেখ্য, এবার জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৯ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ৯৩৫টি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button