গাজীপুরে অবৈধ নর্দান মার্বেল টাইলস কারখানার দূষণ চলছেই, ডিডি নয়নের বাণিজ্য চাঙ্গা!

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যতম প্রধান কাজ হল জনস্বার্থে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখা। কিন্তু সংস্থাটির একশ্রেণির কর্মকর্তার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
গাজীপুর জেলা পরিবেশ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া তেমনই একজন। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ওপর মহলে হাত থাকার কথা বলে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করছেন না।
আলোচিত ডিডি নয়ন মিয়া গাজীপুরে যোগদান করার পর জেলাজুড়ে নানামুখী দূষণের তাণ্ডব চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট উইং মাঝে-মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও দণ্ডিতদের দূষণ থামছে না।
অভিযোগ রয়েছে, ডিডি নয়ন মিয়া পরিবেশগত ছাড়পত্রবিহীন ও দূষণ সৃষ্টিকারী অনেক শিল্প কারখানাকে গোপনে সহযোগিতা করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে যেসব দূষিত কারখানা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে, ওই কারখানাগুলোর মধ্যে কিছু মালিক নয়ন মিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত ৬ মে ঘটনার আড়ালে-তে সদর উপজেলার নলজানী এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বৃহৎ মাদবর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের মারাত্মক দূষণের ওপর একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে ডিডি নয়ন মিয়ার কারসাজিতে পরিবেশগত ছাড়পত্র বাগিয়ে নেওয়ার তথ্য ওঠে আসে। এরপর তার বাণিজ্যের আরও তথ্য আসতে শুরু করেছে।

জেলা পরিবেশ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া

নর্দান মার্বেল কারখানা : গাজীপুর সদর উপজেলার বানিয়ারচালা এলাকার সাফারি পার্ক রোডের দক্ষিণ পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে নর্দান মার্বেল এন্ড গ্রানাইট ইন্ডাস্ট্রিজ। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে কারখানাটির অসহনীয় দূষণ চলছে।
কারখানার চারপাশে ঘনবসতি। শতাধিক বাড়িতে শিশু-বৃদ্ধসহ পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। বর্তমানে দিন-রাত ছয়টি মেশিনে ২২ থেকে ৩৫ টন ওজনের পাথর কাটার কাজ চলে। বিকট শব্দে কারখানা সংলগ্ন বাড়িঘরে কম্পন হয়। ঘুমন্ত শিশুরা ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে। ডাস্ট উড়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে খাবার ও কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়।
কারখানাটির মালিক ঢাকার সরদার মোহাম্মদ আলী। কারখানার দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম অংশ উন্মুক্ত। মেশিনগুলো ভূমি থেকে ১৫ ফুট ওপরে স্থাপন করা হয়েছে। এতে শব্দ প্রতিরোধী কোন ব্যবস্থা নেই।
পাথর কাটা শুরু হলেই শব্দ দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। কারখানাটির পশ্চিম অংশে টাইলস কাটার জন্য ছোট ছোট মেশিন বসানো হয়েছে। এতে সৃষ্ট ধুলাজাতীয় বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে নির্গত হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী এই কারখানার কারণে বাসিন্দাদের শ্রবণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। হৃদরোগ ও মস্তিষ্কজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। শিশুরা অসুস্থ হচ্ছে। বিরূপ প্রভাবে কাঁঠালসহ ফলমূলের উৎপাদন কমেছে। মালিককে বারবার বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
তারা আরও জানান, কারখানাটির দূষণ নিয়ে ইতিপূর্বে ঘটনার আড়ালেআলোকিত নিউজ ডটকমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পরও পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সুযোগ পেয়ে মালিকের দাপট দিন দিন বাড়ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ না করেই পর্যায়ক্রমে দূষণ সৃষ্টিকারী ভারী মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, ডিডি নয়ন মিয়ার সঙ্গে নর্দান মার্বেল টাইলস কারখানার যোগসাজশ রয়েছে। তিনি কৌশলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মালিককে সহযোগিতা করছেন। পরিদর্শন প্রতিবেদনে কারসাজি করে ছাড়পত্র প্রদানের পাঁয়তারাও চলছে।
অপরদিকে জেলা পরিবেশ কার্যালয়ের ডিডি নয়ন মিয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দূষণ ও ছাড়পত্র ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে নোটিশ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
নগরীর একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানার একজন কর্মকর্তা ঘটনার আড়ালে-কে বলেছেন, ডিডি নয়ন মিয়া ঘুষ ছাড়া কিছু বুঝেন না। তাকে দাবিকৃত টাকা না দিলে নানা কারণ দেখিয়ে অবস্থানগত ও পরিবেশগত ছাড়পত্রের প্রতিবেদন বিপক্ষে যায় অথবা ঝুলে থাকে। আবার টাকা দিলে নির্দেশিত শর্তাবলি প্রতিপালন না করলেও পক্ষে প্রতিবেদন দিয়ে ছাড়পত্র পাইয়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিডি নয়ন মিয়া ওপর মহলে হাত থাকার কথা বলে বেশ দাপট দেখান। সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের ছেলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তখন তিনি চুক্তি করে পরিবেশ দূষণকারী কয়েকটি বড় কারখানার ছাড়পত্র পাইয়ে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে ‘নিষিদ্ধ মৌজায়’ মাদবর এগ্রোর দূষণের দাপট, ডিডি নয়নের কারসাজিতে ছাড়পত্র!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button