গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্ক থেকে ‘গাছ পাচার’!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বৃক্ষরাজি ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম সুরক্ষিত উদ্যান।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে পাঁচ হাজার ২২ হেক্টর বনভূমি নিয়ে এটি গড়ে উঠেছে।

কিন্তু কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী মূল্যবান গাছপালা পাচার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন।

প্রকাশ্য দিবালোকে গাছ পাচারের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে আলোকিত নিউজ টিম।

৩০ মে, বেলা তিনটা। উদ্যানের ২ নম্বর গেট দিয়ে বের হল আকাশমনি গাছবোঝাই একটি পিকআপ।

পিকআপটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ওঠে প্রথমে ৩ নম্বর গেটের দিকে যায়। পরে ক্রসিং দিয়ে রাইট সাইডে গিয়ে চলতে থাকে উত্তর দিকে।

পিকআপ এবার মহাসড়ক দিয়ে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার দিকে যাচ্ছে

পিকআপের পেছনে নম্বর প্লেটে ‘বন বিভাগ’ লেখা মোটরসাইকেলে করে হেলমেট মাথায় এক বনপ্রহরী যান। তাই রাস্তায় কেউ বাধ সাধেননি।

পিকআপটি রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পার হয়ে ডানে মোড় নেয়। পরে কাপাসিয়া রোড দিয়ে চলে যায় হালডোবার দিকে।

রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা দিয়ে পিকআপটি এখন কাপাসিয়া রোডে

উদ্যানের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল, শাপলা রেস্ট হাউজের পশ্চিমে দুটি জলাশয়ের পাশে আটটি আকাশমনি গাছের মোথা। আরও কয়েক পিস কাঠ পড়ে আছে। মোথা আবর্জনা দিয়ে ঢাকা।

আবর্জনা দিয়ে এভাবেই ঢাকা হচ্ছে মোথা

সেখানকার শামসুলের দোকান নামক স্থানে পিকআপ লোড করা হয়। ডালপালাগুলো ঘটনাস্থলেই পড়ে রয়েছে। পাতা পচে নষ্ট হচ্ছে পানি।

ঘটনার দিন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন বন পরিদর্শন শেষে উদ্যানের চম্পা রেস্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন।

১৬ জুন, দুপুর একটা। গাছ কাটার খবর পেয়ে ৩ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে ডান দিকে ছুটে যায় আলোকিত নিউজ টিম।

অল্প দূরে শাপলা লেকের পাড়ে বড় দুটি আকাশমনি গাছ কাটা। কয়েক পিস কাঠ পড়ে আছে।

শাপলা রেস্ট হাউজ পার হয়ে অর্কিড রেস্ট হাউজের পাশে গিয়ে দেখা গেল আরও চিত্র।

পাঁচজন বড় দুটি আকাশমনি গাছ কাটছেন। তারা জানালেন, গাছ দুটি ভেঙে পড়েনি। অন্য গাছের ওপর কাত হয়েছিল।

ইচ্ছামত কাটা হচ্ছে গাছ। পিকআপেও ছিলেন তারা।

আরেকটু এগিয়ে দেখা গেল, লেকের পাড়ে সদ্য কাটা তিন পিস আকাশমনি কাঠ পড়ে আছে। গাছের মোথা কাদামাটিতে লেপটে দেওয়া হয়েছে। আরও কাঠ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

জানতে চাইলে পার্ক বিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদার রহমান আলোকিত নিউজকে বলেন, ঝড়ে পড়া কিছু গাছ আমরা কেটেছি। যাদের হাতে কাটিয়েছি, আমরা টাকা দিতে পারিনি। তারা কিছু ডালপালা নিয়ে গেছে।

কী পরিমাণ গাছ কাটা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোট ৫৩টি কাটার অনুমতি চেয়েছি। ১০-১২টি কাটা হয়েছে। ডিএফও মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন।

মহাসড়ক দিয়ে গাছ নেওয়া প্রসঙ্গে মাহমুদ বলেন, ১ নম্বর গেট থেকে দুটি গাছ এসেছে। ৩ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকিয়ে অফিসের সামনে লট করে রেখেছি।

পিকআপ চলে গেছে উত্তর দিকে, পোশাক পরিহিত স্টাফ পাহারা দিয়েছেন-জানালে তিনি এমন কোন কিছু হয়নি বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদুল কবির আলোকিত নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। পার্কের ভেতর এমন কোন ঘটনা ঘটবেও না, আশা করি।

তিনি আরও বলেন, ঝড়ে কিছু গাছ পড়ে গেছে। কাটা যাবে সম্ভবত। এগুলো কাটলে অনুমতি লাগে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উদ্যানের কাটা গাছ নিলামেও বিক্রি করা হয়। মাঝে-মধ্যে কর্মকর্তারা কৌশলে কম মূল্যে নিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করেন।

সূত্র আরও জানায়, মাহমুদ ডিএফওর লোক হিসেবে পরিচিত। তিনি পার্ক থেকে বারইপাড়া বিটে অকালীন বদলি হয়েছিলেন। পরে আবারও পার্কে ফিরে সিনিয়রদের ডিঙিয়ে ভারপ্রাপ্ত ফরেস্টারের দায়িত্ব পান।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত গাছ কাটা ও পাচার গুরুতর অপরাধ। সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে বন দখল করে ফিলিং স্টেশন!

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker