কালিয়াকৈরের জাথিলা বিটে বন কেটে অবাধে গড়ে উঠছে দোকানপাট ও বাড়িঘর
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের একটি ব্যতিক্রমী বাজারের নাম ইটালী বাজার। বাজারটির পূর্ব পাশে সংরক্ষিত বনভূমি। সেখানে দোকানের বেশ চাহিদা রয়েছে।
বাজার সংলগ্ন প্রায় এক একর বনভূমিতে চার-পাঁচ বছর আগে দ্বিতীয়বারের মতো আকাশমনি বাগান সৃজন করে ঢাকা বন বিভাগের কাঁচিঘাটা রেঞ্জের জাথিলা বিট অফিস। উপকারভোগী হিসেবে প্লট পান স্থানীয় খোরশেদ আলম।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বনভূমি দখল ও গাছ কাটা শুরু হয়। তখন উপকারভোগী খোরশেদও প্লট থেকে দোকানের জন্য ভিটি বিক্রি শুরু করেন।
১৬ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত প্রস্থবিশিষ্ট একেকটি ভিটি ৪০-৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইতিমধ্যে শফি মেম্বার ও সিদ্দিক বিএসসির নেতৃত্বে অন্তত ২০ জন ভিটি কিনে দোকান নির্মাণ করেছেন। এর ফলে প্রায় এক বিঘা বাগান ধ্বংস হয়েছে।
একই বিটের বড়চালা বাজার আরও আগে বনভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে। বাজারের চারপাশে বনভূমি। ৫ আগস্টের পর বাজার সংলগ্ন আকাশমনি প্লটের অংশ থেকে ভিটি বিক্রি শুরু করেন উপকারভোগী নিয়ত আলী। পরে তাতে কয়েকটি দোকান নির্মাণ করা হয়।
এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন আনিছ মেম্বারের ভাই আবুল হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন বনপ্রহরী আবদুল মোতালেবের ছেলে আমিনুল ইসলাম ও তার ভাই আবু বকর। আবদুল মোতালেব বর্তমানে সিলেট বন বিভাগে কর্মরত আছেন। তার ছেলে আমিনুল বাড়ি সংলগ্ন বনভূমি দখল করে একটি বড় ঘরও নির্মাণ করেছেন।
বনভূমিতে গড়ে ওঠা মজিদচালা বাজারের চারপাশেও বনভূমি। গত ২০১৬-১৭ সালে বাজার সংলগ্ন বনভূমিতে আকাশমনি বাগান সৃজন করে তিনজন উপকারভোগীকে প্লট দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন মাইন উদ্দিন মুন্সি, শরবত আলী ও আবদুর রহিম।
এই উপকারভোগীরা পর্যায়ক্রমে বাগানের গাছ বিনষ্ট করে ভিটি বিক্রি করতে থাকেন। ৫ আগস্টের পর প্রায় এক বিঘা বনভূমিতে ২০-২৫টি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপকারভোগী মাইন উদ্দিন মুন্সির ছেলে জাহাঙ্গীর, রবিউল, আওয়াল ও নূরুর চারটি দোকান রয়েছে। এখানেও দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন শফি মেম্বার। মামলা থামানোর জন্য উপকারভোগীদের সভাপতি ইমান আলী ও তার ভাই আবজাল হোসেন দোকানপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে তোলার প্রক্রিয়া করছেন বলে অভিযোগ।
এলাকাবাসী জানান, শুধু এই তিনটি বাজারেই নয়, বিটের বিভিন্ন এলাকায় বনভূমি দখল করে অসংখ্য নতুন বাড়িঘর করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর বড়চালা বাজারে একটি দোকান নির্মাণে বাধা দিতে গিয়ে বন কর্মকর্তারা হামলার শিকার হন। পরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় ও বন আইনে পৃথক মামলা হওয়ায় অন্য দখলকারীরা ভীত হয়ে পড়েন।
তারা আরও জানান, গত মাস থেকে যেসব স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে, সেসবের মধ্যে অনেকে বিট অফিসের সঙ্গে লেনদেন করে কাজ করছেন। অফিসের অনুমতি ব্যতীত যারা স্থাপনা করেছেন, এখন তাদের তালিকা করে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
বিট অফিস সূত্র জানায়, বিট কর্মকর্তা মাসুম উদ্দিন আহমেদকে ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলে বদলির আদেশ হয়েছে। তিনি বিটে যোগদানের পর থেকেই বনভূমি দখল ও গাছ পাচার বাড়তে থাকে। এখন বিদায়ের আগে মোটা অঙ্কের টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা চলছে।
এ ব্যাপারে জাথিলা বিট কর্মকর্তা মাসুম উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।