গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য, লেনদেনে ২০ উমেদার!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর পৌর ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য জমে উঠেছে।

উমেদার নামধারী ২০ দালালকে অফিসের ভেতরে সরকারি কর্মচারীর মত কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

সেবাপ্রার্থী জনসাধারণের কাছ থেকে নানা কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সরেজমিনে জানা যায়, নগরীর পৌর ভূমি অফিস সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীন। অফিসটিতে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে চলছে ঘুষ-দুর্নীতি। কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে।

পৌর ভূমি অফিসে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার যোগদান করেন গত জানুয়ারিতে। যোগ দিয়েই তিনি ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান।

এরপর খাদিজা আক্তার অফিসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন। তার নির্দেশে উমেদারদের অফিসের ভেতরে চেয়ার-টেবিলে বসে সরকারি কর্মচারীর মত কাজ করার সুযোগ পোক্ত হয়।

তারা নিয়মিত অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। জমির নামজারি ও জমাভাগ, খাজনা আদায় এবং মিস কেসের প্রতিবেদন তৈরির কাজ তাদেরকে দিয়ে করানো হয়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও উমেদারদের জন্য উন্মুক্ত।

আলোচিত উমেদারদের মধ্যে রয়েছেন ধীরাশ্রম এলাকার বিল্লাল, বালুচাকলীর সোহেল, কানাইয়ার মাসুম, শ্রীপুরের কাইয়ুম, ঝাড়ুদার পরিচয়ধারী শরীফ ও জামালপুরের অবসরপ্রাপ্ত নায়েব পরিচয়ধারী সুরুজ্জামান।

তাদের মধ্যে মাসুম খারিজের দালালি ও কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। শরীফের গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। তিনি ভূমি অফিসের উত্তরে সাহাপাড়া এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন।

এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পদে শচীন্দ্র কুমার রাজবংশী যোগদান করেছেন। এরপর থেকে খাদিজা আক্তারের একক বাণিজ্যে ধস নেমেছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, জমির খারিজের আবেদন করার পর অফিসে যোগাযোগ করলে নায়েবরা উমেদারদের দেখিয়ে কথা বলতে বলেন। পরে উমেদারদের কথা অনুযায়ী ঘুষ দিলে কাজ হয়ে যায়। নয়তো নথি আটকে হয়রানি করা হয়।

তারা আরও জানান, সরকার খাজনা পরিশোধ সহজ করার জন্য অনলাইন পদ্ধতি চালু করেছে। তবে অনলাইনে আবেদন করার পর ভূমি অফিসে গিয়ে অনুমোদন করাতে হয়। তখন বেশি টাকার খাজনা থাকলে নায়েবরা ঘুষের জন্য অনুমোদন না করে ঘোরান।

এ ছাড়া অনেকের খাজনার পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেশি দেখানো হয়। তখন সংশোধনের জন্য বারবার ধরনা বা কিছু টাকা দিতে হয়।

একাধিক উমেদার জানান, পৌর ভূমি অফিসে খারিজের বিভিন্ন রেট রয়েছে। সাধারণ খারিজ থেকে খারিজে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ন্যূনতম দুই হাজার টাকা, ৪০ শতাংশের ওপরে চার হাজার টাকা, মূল জমি থেকে খারিজে চুক্তি অনুযায়ী এবং অর্পিত সম্পত্তির অবমুক্ত হওয়া ‘খ’ তফসিলভুক্ত জমির খারিজে আট হাজার টাকা করে দিতে হয়।

তারা আরও জানান, জমির পরিমাণ বেশি থাকলে কিংবা কাগজপত্রে কোন ত্রুটি থাকলে খারিজের রেট বেড়ে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এসব গোপন কিছু নয়, সবার জানা।

এসিল্যান্ড অফিস সূত্র জানায়, পৌর ভূমি অফিস থেকে মাসে ৪০০-৫০০ নামজারি ও জমাভাগের প্রস্তাব আসে। এর মধ্যে কিছু থাকে ব্যক্তি বিশেষের। বাকিগুলো থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়।

একজন কর্মকর্তা বলেন, খাদিজা আক্তার ভূমি সহকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালীন আট মাসে বেশির ভাগ খারিজের প্রস্তাব একক স্বাক্ষরে অনুমোদনের জন্য এসিল্যান্ড অফিসে পাঠিয়েছেন। তিনি উপ-সহকারী কর্মকর্তাকে পাত্তা দেননি। এসিল্যান্ডও নীরব ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, গত আগস্টে জেলা প্রশাসনের রাজস্ব সভায় ভূমি অফিসে কোন উমেদার না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উমেদার লালনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জানতে চাইলে ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেন, অফিসে কোন উমেদার নেই। কোন টাকাও লেনদেন হয় না।

একক স্বাক্ষরে খারিজের প্রস্তাব পাঠানো প্রসঙ্গে বলেন, একক স্বাক্ষরে পাঠানো যায়। দুজনের স্বাক্ষরে পাঠাতে হবে-এমন কোন পরিপত্র নেই।

তিনজন কম্পিউটার অপারেটর প্রসঙ্গে খাদিজা আক্তার বলেন, তারা আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত। এসিল্যান্ড অফিস তাদেরকে কাজ করার আইডি দিয়েছে।

একজন ভূমি কর্মকর্তা বলেন, পৌর ভূমি অফিসে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নেই। শরীফও নিয়োগপ্রাপ্ত ঝাড়ুদার নয়। ওই পদে একজন নারী আছেন।

এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাফে মোহাম্মদ ছড়ার সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker