গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে ডিএডি শামীমের ঘুষের রাজত্ব চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ডিএডি শামীম হোসাইনের রাজত্ব চলছেই। তার বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যে জনসাধারণ রীতিমত অতিষ্ঠ। কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি যা খুশি তা-ই করে যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপ-সহকারী পরিচালক শামীম হোসাইন হবিগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গত আগস্টে গাজীপুরে যোগ দিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘাঁটি গাড়েন। তার ‘ঘুষ ছাড়া কাজ নেই’ নীতির কারণে জনসেবার সরকারি উদ্দেশ্য ভেস্তে যাচ্ছে। একাধিকবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশি অভিযানের পরও দালালদের দৌরাত্ম্য অব্যাহত রয়েছে।

ডিএডি শামীম হোসাইনের স্বেচ্ছাচারিতা এখন সীমাহীন। তিনি আখেরি বাণিজ্যের নেশায় কাউকে তোয়াক্কা করেন না। প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রায় ১০ লাখ টাকা।

ডিএডি শামীম হোসাইন কতিপয় কর্মচারী ও দালাল নিয়ে একটি সিন্ডিকেটও করেছেন। অফিস সহকারী মারজানা ইয়াসমিন তার প্রধান সহযোগী। সাথে আছেন ডেসপাস শাখার কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম ও ডেলিভারি শাখার কর্মচারী হাসিবুর রহমান। এর মধ্যে মারজানা ইয়াসমিনকে নিয়ে নানা কথা চাউর হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএডি শামীম হোসাইন সরকারি অফিসটিকে বাসার মত ব্যবহার করছেন। তিনি কাঁথা-বালিশ নিয়ে অফিসের ভেতরেই রাতযাপন করেন। সপ্তাহের শেষে ব্যাগে ভরে ঘুষের টাকা নিয়ে প্রাইভেটকারে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল যান। এ নিয়ে অফিসের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা হচ্ছে।

সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যমতে, পাসপোর্ট অফিসের কাউন্টারে সেবাপ্রার্থীরা যথানিয়মে আবেদন জমা দিতে যান। তখন কাগজপত্র ঠিক থাকলেও নানা খুঁত ধরে আবেদন ফেরত দেওয়া হয়। পরে আবেদনকারীরা আশপাশে অবস্থানরত দালালদের দাবিকৃত টাকা দিলেই আবেদন গৃহীত হয়। সাধারণ বা জরুরি-সব ধরনের পাসপোর্টে দালালরা অফিস খরচ বাবদ নেয় ৯০০ টাকা। চার-পাঁচ দিনে পাসপোর্ট নিলে লাগে চার হাজার টাকা। দালালরা আবেদন ফরম পূরণ ও ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে পারিশ্রমিক হিসেবে ৫০০-৬০০ টাকা নেয়। কেউ কেউ বেশিও নেয়।

দালালরা আগে আবেদন নিজে জমা দিত। লেখালেখি ও ভ্রাম্যমাণ আদালত চলায় এখন ফোন দিয়ে আবেদনকারীকে অফিসের কর্মচারীদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যা ‘ওপেন সিক্রেট’।

দালালরা অফিসের কর্মচারীদের কাছে ৯০০ টাকা করে জমা দেয়। কর্মচারীরা ১০০ টাকা রেখে ৮০০ টাকা করে জমা দেন অ্যাকাউন্টেন্টের কাছে। পরে তা ডিএডি শামীম হোসাইনের হাত হয়ে বণ্টন হয়। গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে এখন দৈনিক প্রায় ২০০ আবেদন জমা পড়ে। আবেদনগুলো থেকে দৈনিক আদায় হয় পৌনে দুই লাখ টাকা। পেশাদার দালাল অন্তত ২০-৩০ জন।

এ ব্যাপারে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান দাবি করেন, আগের চেয়ে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker