গাজীপুরে ডিএফওর আশকারায় দালাল আন্তার ব্যাপক চাঁদাবাজি!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে বনের এক দালালের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত আন্তা আলী নগরীর ২২ নং ওয়ার্ডের জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে।

সরেজমিনে জানা যায়, ওই এলাকার অন্তত ৩০ বিঘা বনভূমি নিয়ে খাসপাড়া। দীর্ঘকালে পর্যায়ক্রমে গড়ে উঠেছে শতাধিক বাড়ি।

বর্তমানে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫০০ মানুষের বসবাস সেখানে। চাঁদা দিয়ে টিকে আছেন তারা।

খাসপাড়াসহ আশপাশে আধিপত্য বিস্তার করেছেন আন্তা। গত পাঁচ বছর ধরে তার কথায় চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা।

ইতিমধ্যে ভবানীপুরে বদলি হওয়া বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলাম বাউপাড়ায় যোগদানের পর তিনি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ডিএফও জহির উদ্দিন আকনও তাকে কাছে টেনে নেন।

পৌনে ১০০ বাসিন্দা স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ওঠে আসে চাঁদাবাজির নেপথ্য কাহিনি।

খাসপাড়ায় নয়টি খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গত মাসে ছোট খুঁটি পাল্টিয়ে বড় খুঁটি স্থাপন করা হয়।

খবর পেয়ে আন্তা গিয়ে দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে হুমকি দেন।

পরে ভয়ে আশেদ আলী তাকে সাত হাজার টাকা ও চাঁন মিয়া চার হাজার টাকা দেন। মামলা না দিতে মোবাইলে অনুরোধ করেন কাঠমিস্ত্রি নাজমুল।

জবাবে আন্তা বলেন, অফিসে যাইতাছি আমি। ৩২ জনে টাকা দিবি দেড় লাখ। তুই দুই হাজার দে, নামডা কাইডা দেই। না পারলে বউ বন্ধক থউগা।

শারমিন আক্তার অভিযোগ করেন, তারা তিন-চার মাস আগে পুরনো ঘর ভেঙে নতুন করে দিয়েছেন। আন্তাকে তিন দফায় দিতে হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা।

শেষে ১০ হাজার টাকা দিতে দেরি হওয়ায় কয়েকজন বনপ্রহরী নিয়ে হানা দেন। পরে টাকা দিয়ে আন্তার বাড়ি থেকে দা-শাবল নিয়ে আসা হয়।

পোশাক শ্রমিক সেলিনা আক্তার জানান, তারা একটি ঘরের জন্য আন্তাকে ৩৭ হাজার টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে বিট অফিসের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।

জেসমিন আক্তার জানান, ঘরের টিনের বেড়া পাল্টাতে গত বছর আন্তাকে দিয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা। জানুয়ারিতে টয়লেটের জন্য দেওয়া হয়েছে আরও এক হাজার টাকা।

জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জানান, তারা গত বছর আন্তাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে একটি দোকান ও একটি ঘর করেছেন।

রডমিস্ত্রি লাল চাঁন বলেন, এখানকার সবাই বাড়ির কাজে আন্তাকে কম-বেশি টাকা দিয়েছেন। এখন দেড় লাখ টাকার জন্য মদ খেয়ে এসে হুমকি দিচ্ছেন।

বাসিন্দাদের হিসাব অনুযায়ী, তারা আন্তাকে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা দিয়েছেন। টাকা ছাড়া কোন কাজ করা যায় না।

আন্তা ডিএফও ও বিট কর্মকর্তার সাথে ছবি তুলে তার ফেসবুক আইডিতে একাধিকবার পোস্ট করেছেন। তিনি দম্ভ করে বলছেন, ডিএফও আমার পকেটে থাকে।

ডিএফও ও ফরেস্টারের সাথে আন্তা। বাঁ থেকে প্রথম।

লোকজন আন্তার কথা বিশ্বাসও করছেন। কারণ ডিএফওর নেক দৃষ্টিতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা সাতটি আকাশমনি প্লট পেয়েছেন।

ডিএফও নিজেও ‘আন্তা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ও স্বাবলম্বী’ বলে গত বছরের ২১ জুলাই ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে তার দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়।

আন্তাকে নিয়ে ডিএফওর স্ট্যাটাস

সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, আন্তা আগে থেকেই বন মামলার আসামি। কতিপয় কর্মকর্তা তার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

অপরদিকে আন্তা সংরক্ষিত গজারি বনের গাছও পাচার করছেন। গত ২৭ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে ধারণকৃত একটি ভিডিও আলোকিত নিউজের হাতে এসেছে।

এতে দেখা যায়, বাংলাবাজার রোডের এলিগেন্স ফ্যাক্টরির বিপরীতে এরিস্টোফার্মার গেটের পাশের বন থেকে গাছ কেটে ভ্যান ও অটোযোগে পাচার করা হচ্ছে।

বনের গাছ পাচার

আন্তা বলছেন, ডিএফও ও রেঞ্জারকে জানাইয়া গাছ কাটতাছি। জঙ্গলবাড়ি থেকে পাঁচ ভ্যান কাটছি। বাউপাড়ার স্টাফরা ফোন করে বলে, ভাই আপনারে চালান দিলে আমাগো কী মান-সম্মান থাকব?

এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে আন্তা আলোকিত নিউজকে বলেন, খাসপাড়ার ওরা আমার বাগানের ক্ষতি করছে। তাই দেড় লাখ টাকা চাইছি।

তিনি বলেন, আমি জিডি করছি। অপেক্ষায় আছি, ওরা যদি আমার লগে মিলে মামলা দিমু না। আর যদি না মিলে দিমু।

আন্তা বলেন, ডিএফও, রেঞ্জ অফিসার ও বিট অফিসার আমার পক্ষে। ১০টা টাকা খাইলে কী আমি গার্ড-ফরেস্টার ছাড়া খাই?

তিনি আরও বলেন, টাকা দিছে, ঘর করছে। আরিফ সাহেব কাজ দিছে বেশি। এই যে অভিযোগ করে, অহন যদি ঘর ভাইঙা ফালায়, ফিরাইয়া রাখা পারব?

গাছ কাটা প্রসঙ্গে আন্তা বলেন, জঙ্গলবাড়ির প্লট আমার। কীর্ত্তনের জন্য এক গাড়ি খড়ি দিছি। রেঞ্জ অফিসার ও বিট অফিসার জানে।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker