গাজীপুরে পৌনে দুই কোটি টাকার অধিগ্রহণ বিলে ঘুষ ৭১ লাখ!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর জেলা প্রশাসকের এলএ শাখায় দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জমির অধিগ্রহণ বিল প্রদানে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের তথ্য মিলেছে।

প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার বিলে ৭১ লাখ টাকা লেনদেন নিয়ে প্রথম কিস্তি আজ।

দালাল হিসেবে অভিযুক্ত শরিফ সাদেক নয়ন আগে জেলা প্রশাসনের সাধারণ শাখায় ছিলেন।

বর্তমানে তিনি শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে কর্মরত।

কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের ভিটিপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তাজউদ্দিনের ছেলে নয়ন অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কাপাসিয়ার সাথে মনোহরদীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রাণীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।

এর অংশ হিসেবে কাপাসিয়া রোডের সাথে সংযোগ সড়কের জন্য জনসাধারণের জমি অধিগ্রহণ করে জেলা প্রশাসন।

জরিপের সময় সার্ভেয়ার ও স্থানীয়দের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন নয়ন। এক পর্যায়ে তাদের বিল উত্তোলনের চুক্তি করেন।

নয়ন ক্ষতিগ্রস্তদের বোঝাতে সক্ষম হন যে ভ্যাটসহ খরচ পড়বে ৩০ পার্সেন্ট। সে মতে ৩০০ টাকার খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

স্বাক্ষর নিয়ে বিলের আবেদনও জমা দেন নয়ন। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করিয়ে চেকবইও নিজের কাছে রেখে দেন তিনি।

গত মাসের প্রথম দিকে ব্যবসায়ী সুধাংশু চন্দ্র মন্ডলের জমি ও অবকাঠামো বাবদ এক কোটি ২৪ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়।

তিনি রাণীগঞ্জ বাজার এলাকায় তার মোটরসাইকেলের গ্যারেজে বসে আলোকিত নিউজের সাথে কথা বলেন।

সুধাংশুর নয় শতাংশ জমি ও পাকা স্থাপনার মোট বিল এক কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর মধ্যে কিছু অংশ বিক্রীত থাকায় পুরো বিল উত্তোলন করেননি।

তার সাথে নয়নের প্রথমে চুক্তি ছিল ২৬ লাখ টাকার। অধিগ্রহণে দোকান পড়বে না বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

সুধাংশু বলেন, বিল উঠাতে আমাকে ব্যাংকে যেতে হয়নি। নয়ন উঠিয়ে ৫৬ লাখ টাকা রেখে বাকি টাকা আমার কাপাসিয়ার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন।

এর আগে ২৬ লাখের স্থলে ৫৬ লাখ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সুধাংশুর বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করা হয়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে আপোস করেন।

সুধাংশু আরও বলেন, নয়ন বিলের বাকি টাকাও উত্তোলন করে দিবেন। সিকিউরিটি হিসেবে আমাকে ছয় লাখ টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে।

গত জুলাইয়ে বাড়ৈগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সাহাজ উদ্দিন সর্বপ্রথম জমি ও পাকা স্থাপনার বিল উত্তোলন করেন।

তার স্বজনরা আলোকিত নিউজকে জানান, প্রায় ৪২ লাখ ৭০ হাজার টাকার বিলে নয়নকে দিতে হয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ৬৭ লাখ টাকার দুটি বিলে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ৭১ লাখ টাকা। ঘুষ ছাড়া কেউ বিল নিতে পারছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটির বিল প্রদানের দায়িত্বে আছেন সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম। তার সাথে যোগসাজশ করেই বাণিজ্যে মেতেছেন নয়ন।

জানতে চাইলে নয়ন আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি জড়িত এই ধরনের কোন একটা ডিড-ডকুমেন্টস কেউ দেখাতে পারবে না। অফিসিয়ালি লেনদেন হয়। আমি তাদের সাথে লিংক করাইয়া দিছি।

তিনি বলেন, প্রত্যেক সার্ভেয়ার ১০০ কোটি টাকার মালিক। তারাও তো অনেক সময় সুযোগ পায় না। সুযোগ না পাইলে অনেক সময় অনেকরে দোষে।

নয়ন আরও বলেন, ডিসি অফিসে একটা এলআর ফান্ড আছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কালেকশন হয়। অনেক সময় আত্মীয়-স্বজন থাকে, কথাবার্তা বইলা দিতে হয়। এটা তো আমার দোষের কিছু না।

এ ব্যাপারে সার্ভেয়ার কামরুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, সুধাংশু আমাদের নাজিরের ও সাহাজ উদ্দিন স্থানীয় সরকারের ডিডির আত্মীয়। আমরা তো জানি, কেউ এক পয়সাও নিতে পারেনি।

পার্সেন্টেজ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, নয়নের সাথে কখনো আমার কথা হয়নি। তাকে দেখলে মনে হয় চিনব।

তবে ভারপ্রাপ্ত কানুনগো ওমর ফারুক আলোকিত নিউজকে বলেন, নয়ন ওই ৫৬ লাখেরটাসহ দু-একটা বিলের কাজ করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তরা দালাল না ধরে সরাসরি অফিসে আসলে আমরা সহযোগিতা করব।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker