গাজীপুরের হোতাপাড়ায় গোডাউন, ২০ শতাংশ বনভূমি গায়েব!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের মনিপুর বিটে নানা কৌশলে বনভূমি গ্রাস করা হচ্ছে।

তদন্ত প্রতিবেদন ফাইলবন্দী ও দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযান না হওয়ায় দখলদারদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।

এবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক সংলগ্ন সান পাওয়ার সিরামিকসের পাশে বড় গোডাউন নির্মাণ করছে গ্যালাক্সি।

সরেজমিনে জানা যায়, বোকরান মনিপুর মৌজার বেগমপুর হোতাপাড়া এলাকার এসএ ৫৯৮ নং দাগের জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত। পার্ট দাগটির আরএস রেকর্ডে সৃষ্ট ১৭৭৩ নং দাগ সংরক্ষিত বনভূমি।

ঢাকার গুলশানের তৌফিক উদ্দিন আহম্মেদ ব্যবসায়ী। তিনি সান পাওয়ারের পাশে দুটি গোডাউন নির্মাণ করে বহুজাতিক কোম্পানি নেসলেকে ভাড়া দিয়েছেন।

তার স্ত্রী নজীবা বেগম বন্দোবস্ত গ্রহীতার কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে ১৭৭৩ নং দাগের ৯০ শতাংশ জমির কাতে ৭০ শতাংশের মালিকানা দাবি করে গাজীপুর দেওয়ানি আদালতে একটি মামলা করেন। পরে তাদের পক্ষে রায় হয়ে ৭০ শতাংশ জমি ২ নং খতিয়ান থেকে ১ নং খতিয়ানে কর্তন করা হয়।

এরপর তারা সেখানে গত মাসে তৃতীয় গোডাউন নির্মাণ শুরু করেন। ২০-২২ হাজার বর্গফুট আয়তনের গোডাউনটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

প্রশ্ন উঠেছে, গ্যালাক্সির বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে থাকা ১৭৭৩ নং দাগের অবশিষ্ট ২০ শতাংশ জমি কোথায়? খোদ বিট অফিসও এর খোঁজ দিতে পারছে না।

ওই স্থানে বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য চার কোটি টাকা। সে হিসাবে ২০ শতাংশ জমির মূল্য দাঁড়ায় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা।

গ্যালাক্সির কেয়ারটেকার সেলিম আলোকিত নিউজকে জানান, বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে মালিকের জমি ১৫ বিঘা। ২০ শতাংশ অন্য দিকে থাকতে পারে।

মালিকের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ভিজিটিং কার্ড রেখে দুই দিন সময় নেন। পরে তিন দিন পার হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি পুলিশ নিয়ে একবার কাজ বন্ধ করেছিলাম। গ্যালাক্সি রায়ের কাগজ দেখিয়ে কাজ করছে।

ডিমারকেশন ছাড়া কাজ করা ও ২০ শতাংশ জমি বুঝে না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা থানায় সাধারণ ডাইরি করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেখি কী করা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যৌথ ডিমারকেশন ছাড়াই গোডাউন নির্মাণ করা হলেও বন বিভাগ ব্যবস্থা নেয়নি। বনের জমি বুঝে না নিয়ে এভাবে গায়েবের সুযোগ দেওয়া গুরুতর অপরাধ।

স্থানীয় একজন জানান, তিনি ঘটনাটি ফোনে প্রধান বন সংরক্ষককে (সিসিএফ) জানিয়েছেন। তারপরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে নজীবা বেগমের রেকর্ড সংশোধনী সংক্রান্ত মিস মোকদ্দমার রায়ে নামজারি ও জমাভাগ (খারিজ) নথি নং ২১১২/২০১৪-১৫ উল্লেখ রয়েছে।

বিষয়টির খোঁজ নিতে মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যায় আলোকিত নিউজ টিম। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল আলীম রেজিস্টার ঘেঁটে কিছুই পাওয়া যায়নি বলে জানান।

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, গ্যালাক্সির দ্বিতীয় গোডাউনও ডিমারকেশন ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে। তখন দায়িত্বে ছিলেন বিট কর্মকর্তা আশরাফুল আলম দোলন।

এভাবে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছে। কিন্তু বনভূমি রক্ষা ও উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বন বিভাগ।

এ ব্যাপারে রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুল হকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ ইউছুপের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে সান পাওয়ারের ১২ কোটি টাকার বনভূমি দখল ধামাচাপা!

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker