কাপাসিয়ায় গৃহ নির্মাণে হরিলুট : দেখার কেউ নেই!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় গরিবের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে হরিলুট অব্যাহত রয়েছে।

বিষয়টির ওপর আলোকিত নিউজ ডটকমে তিনটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীরের নির্দেশে আরডিসি তদন্ত করলেও প্রকৃত চিত্র এড়িয়ে যাওয়া হয়।

সুযোগ পেয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাকি বিল্লাহ ও সহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার এখন বেপরোয়া।

প্রকল্প সমাচার : উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ‘জমি আছে ঘর নেই’ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রায় পৌনে ৪০০ গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এ বরাদ্দ দিয়েছে। ঘরপ্রতি বাজেট এক লাখ টাকা।

বারান্দাসহ সাড়ে ১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের টিনশেডে পাকা ভিটি। সাথে টয়লেট।

প্রকল্পটির আহ্বায়ক ইউএনও ও সদস্যসচিব পিআইও। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানও সদস্য।

সবচেয়ে বেশি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে ঘাগটিয়া ইউনিয়নে। সেখানে ঘর ১৬৯টি।

আরও পড়ুন : কাপাসিয়ার ঘাগটিয়ায় গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির ছড়াছড়ি

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঘরগুলো নির্মাণে ইস্টিমেট মানা হচ্ছে না। এক নম্বর ইটের বদলে দুই ও তিন নম্বর ইটের ছড়াছড়ি।

অনেক ঘরে পিকেট খোয়ার বদলে ব্যবহার হচ্ছে পরিমাণে কম ও নিম্নমানের খোয়া। ইটের গাঁথুনি মাটির নিচ থেকে না দিয়ে ওপর থেকে বসানো হচ্ছে।

প্রতিটি ঘরে আরসিসি খুঁটি ১৭টি। মাটির এক ফুট নিচ থেকে গোড়ায় ছয় ইঞ্চি করে ঢালাই না দিয়েই খুঁটিগুলো স্থাপন করা হচ্ছে।

খুঁটিতে কারচুপি : ইস্টিমেট অনুযায়ী, ঘরের ১২টি খুঁটির দৈর্ঘ্য থাকার কথা ১২ ফুট এবং বারান্দা ও টয়লেটের নয়টিতে ১০ ফুট। কিন্তু এক ফুট করে কম দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া খুঁটিগুলোতে ছয় মিলির চারটি রড দেওয়ার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও দেখা গেছে দুটি। তা-ও আবার নিম্নমানের।

তরগাঁওয়ের লতাপাতা বাজারের উত্তর পাশে নাজিম উদ্দিনের স্যানিটারি ওয়ার্কশপ। তিনি প্রকল্পে খুঁটি সরবরাহ করছেন।

নাজিম আলোকিত নিউজকে জানান, ১১ ফুটের খুঁটিতে প্লেইন বা ডাউন রড দেওয়া হচ্ছে চারটি। নয় ফুটের খুঁটিতে তিনটি দিলেও চলে। প্রতি ফুটে দাম পড়ে ৫০ টাকা।

হিসাব করে দেখা গেল, ২১টি খুঁটিতে ২১ ফুট কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ঘরপ্রতি আত্মসাৎ হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা।

জানালায় কারচুপি : ইস্টিমেট অনুযায়ী, প্রতি ঘরে জানালা থাকার কথা চারটি। কিন্তু দেওয়া হচ্ছে দুটি। কারও কারও ঘরে জানালা একটি।

সিংহশ্রী ইউনিয়নে ৮৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরেই জানালা দুটি। দরজা-জানালায় রংও করা হয়নি।

আরও পড়ুন : কাপাসিয়ার সিংহশ্রীতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে ভয়াবহ দুর্নীতি!

প্রতিটি জানালার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩৫০ টাকা। সে হিসাবে ঘরপ্রতি আত্মসাৎ করা হচ্ছে ৭০০ টাকা।

টিনে কারচুপি : ঘরের চৌচালায় নয়টি টুয়ার দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট। ইস্টিমেটে দশমিক ৪৬ মিলির টুয়া ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও দেওয়া হচ্ছে দশমিক ৩৬ মিলি।

একজন মিস্ত্রি জানান, মাঝে-মধ্যে দশমিক ৪২ মিলির টুয়া দেওয়া হয়েছে। এভাবে মিলি কম দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

অপরদিকে সিংহশ্রীতে উপকারভোগীদের দিয়ে বালু কেনানো হয়েছে। ঘাগটিয়ায় কেউ কেউ কিনে দিয়েছেন ইট ও সিমেন্ট।

ফ্লোরে তিন ইঞ্চির বদলে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে এক-দেড় ইঞ্চি। কিছু ঘরে দেখা গেছে নিম্নমানের কাঠ।

উপকারভোগীরা অভিযোগ করেন, দুর্নীতির কারণে কাজ শেষ হতে না হতেই ফ্লোর ভেঙে ও দেবে যাচ্ছে। বর্ষায় ইট সরে ঘর ঝুঁকিতে পড়বে।

আরও পড়ুন : কাপাসিয়ায় গরিবের গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে হরিলুট

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। সে হিসাবে শুধু সিংহশ্রী ও ঘাগটিয়ায় হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্তত ৮৩ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক প্রকল্পের কাজে এ ধরনের দুর্নীতি গুরুতর। প্রয়োজনে দুদকের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker