গাজীপুরের বাউপাড়া বিটে ‘মোটা অঙ্কের লেনদেনে’ বনভূমি দখল!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার দক্ষিণ দিক দিয়ে মিয়াবাড়ি রোড। গজারিয়াপাড়া এলাকার এই রোড দিয়ে অল্প এগোলে ফখরুল ইসলামের প্রজেক্ট।

বনভূমি দখল করে প্রস্তাবিত কটেজ এন্ড পিকনিক স্পটটির চারদিকেও সংরক্ষিত বনভূমি। পশ্চিম পাশ দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবশিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের চেষ্টা চলে আসছিল।

জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন যোগদানের পর হঠাৎ আরসিসি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। পরে গত ১৪ এপ্রিল বিট অফিসের লোকজন গিয়ে বেশির ভাগ অংশ ভেঙে দেন।

এই অংশটুকু ভেঙে দেওয়া হয়েছিল

এরপর চলতে থাকে রফাদফা। এক পর্যায়ে তারা বৈঠকে বসেন। লেনদেন হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এবার আর কোন বাধা আসেনি। নির্বিঘ্নে নির্মাণ করা হয় আট ফুট উঁচু দেয়াল। এতে দখল আরও পোক্ত হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর বাহাদুরপুর এলাকার বাসিন্দা ফখরুল ইসলামের প্রজেক্টে জমির পরিমাণ প্রায় পাঁচ একর। এর মধ্যে সিএস ২২৬ ও আরএস ৪৫৫, ৪৫৬ ও ৪৫৭ নং দাগের ৪২ শতাংশ জমি বন বিভাগের নামে গেজেটভুক্ত। পার্ট দাগটির বাকি ৭৪ শতাংশ জোতভূমি।

ফখরুল ইসলাম ২০১৮ সালে জেলা প্রশাসক বরাবর ডিমারকেশন চেয়ে একটি আবেদন করেন। যার সীমানা নির্ধারণী মোকদ্দমা নং ২৬/১৮। পরে ২০১৯ সালের শেষ দিকে আগের বিট কর্মকর্তা আজাদুল কবির উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এতে আবেদিত ভূমির বাউন্ডারি ওয়ালের ভেতরে থাকা ৪২ শতাংশ সংরক্ষিত বনভূমি অবমুক্ত করা সাপেক্ষে ডিমারকেশনের পক্ষে মত দেওয়া হয়। তবে প্রজেক্টে বনভূমি ব্যতীত যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকলেও তিনি কৌশলে দক্ষিণ দিক দিয়ে রাস্তা ও চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।

বনভূমির ওপর দিয়ে দেখানো রাস্তা

স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকায় বিঘাপ্রতি জমির বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত দুই কোটি টাকা। সে হিসাবে দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় আড়াই কোটি টাকার ওপরে।

সূত্র বলছে, নবনির্মিত বাউন্ডারি ওয়ালের অংশে দখলীয় বনভূমি আট শতাংশ। আজাদুল কবির পুরো জমির সুষ্ঠু মাপজোখ ও পর্যালোচনা ছাড়াই প্রতিবেদন দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ফখরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, ডিমারকেশনের রিপোর্ট দেখলাম আমি, বাউন্ডারি ওয়াল আগে ছিল। ভাঙার পর আবার করছে, আমরা দেখছি।

মর্দপাড়ায় কাজ ফের শুরু : গজারিয়াপাড়ার মর্দপাড়া মহল্লায় দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত গজারি বনের ক্ষতি করে ও ডিমারকেশন ছাড়াই বাড়িঘরের নির্মাণ কাজ চলে আসছে।

বিষয়টির ওপর গত ২১ এপ্রিল আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজল তালুকদারের নির্দেশে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্মাণাধীন কাজগুলো বন্ধের নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার মর্দপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রীন কোল্ড স্টোরেজের পূর্ব পাশে ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। শাহিদুল নতুন আরেকটি বাড়ির কাজ শুরু করেছেন। রফিকের তিন তলা ফাউন্ডেশন বাড়ির কাজও থেমে নেই।

গ্রীন কোল্ড স্টোরেজের পাশে ছাদ ঢালাইয়ের তোড়জোড়

তাদের মধ্যে রফিক বনের কিছু জায়গা দখল করেছেন। শাহিদুলের সদ্য সমাপ্ত বাড়ির কাজে বনের ভেতর দিয়ে ট্রাকযোগে নির্মাণ সামগ্রী নেওয়ায় গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একজন বলেছেন, এভাবে নির্মিত স্থাপনাগুলোকে কেন্দ্র করে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। নিয়ম-কানুন না মানায় বন ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বিট কর্মকর্তা আলোকিত নিউজকে বলেন, কাজ তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে যদি কেউ কাজ করে, কী করব বলেন।

দিনের আলোতে কাজ চলার কথা জানালে তিনি বলেন, আপনি ওখানে গেছিলেন, আমারে ফোন দিতেন। আমি খোঁজ নিয়ে দেখতেছি।

বনপ্রহরী রনি কাহিনি : বনপ্রহরী রনি বাউপাড়া বিটের কথিত ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার দাপটে অন্য কর্মচারীরাও তটস্থ।

অভিযোগ রয়েছে, রনি ও জাহাঙ্গীর বিটে পুরনো হওয়ায় বাণিজ্যের মাঠ-ঘাট সম্পর্কে অভিজ্ঞ। তাই বিট কর্মকর্তাও তাদের দেখানো পথে চলছেন। মদদ পেয়ে মর্দপাড়ার কাজ আবার শুরু হয়েছে।

রনি বলে বেড়াচ্ছেন, সাংবাদিকরা লিখলে কী হয়। আমার তো কিছু হয়নি। আমি যা করি, ডিএফওকে বলেই করি।

জাঙ্গালিয়াপাড়ায় বাণিজ্য : জাঙ্গালিয়াপাড়া এলাকার বাগদাদ হোল্ডিংয়ের দ্বিতীয় রাস্তার দক্ষিণ পাশে গেজেটভুক্ত বনভূমি। সেখানে সপ্তাহ দুয়েক আগে রঙিন টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ করেছেন হাসান।

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, বনপ্রহরী রনির সাথে বহুল আলোচিত দালাল আন্তার বেশ সখ্যতা রয়েছে। এ ঘটনায় আন্তার মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের মর্দপাড়ায় বনের গাছ কেটে রাস্তা, ডিমারকেশন ছাড়াই বাড়িঘর!

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker