গাজীপুর বিআরটিএতে ঘুষ বাণিজ্য : পরিদর্শক সুমন ক্যাশিয়ার, এডি বেপরোয়া

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে ঘুষ বাণিজ্য আবার জমে উঠেছে। বাড়ছে দালালদের দৌরাত্ম্য। বন্ধ হচ্ছে না সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অফিসের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে অতি সতর্কতার সঙ্গে লেনদেন হচ্ছিল। পরে ধীরে ধীরে বাণিজ্যের ধারা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।
সরেজমিনে জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গাজীপুর সার্কেল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উত্তর পাশে দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক রুমের সামনে কোন কাজে কারও সঙ্গে লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়ে নোটিশ সাঁটানো রয়েছে। বহিরাগতদের কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ না করতেও বলা হয়েছে।
বিভিন্ন গাড়ি বা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনের বিষয়ে বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী অফিসিয়াল নিয়ম-কানুন জানেন না। তারা হয়রানি এড়াতে দালালদের দ্বারস্থ হন। লারনার কার্ড অনলাইনে পাওয়া গেলেও মূলত পরীক্ষার বোর্ডের নামে হয় বাণিজ্য।
দালালরা অফিসের নির্দেশে বোর্ডে পাস কার্ড বাবদ নতুন প্রার্থীপ্রতি দুই হাজার টাকা ও নবায়ন প্রার্থীদের কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা করে নেন। টাকা না দিলে ফেল করিয়ে হয়রানি করা হয়। তবে কিছু প্রার্থী নিজেরা আবেদন করে প্রতি বোর্ডে নিজ দক্ষতায় টাকা ছাড়াই উত্তীর্ণ হন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গাজীপুর বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। তিনি এখন ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে আছেন। তার মনোনীত একাধিক দালাল পুরো দালাল চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা বোর্ডের টাকা পরিদর্শক সুমনের কাছে জমা দেন। পরে তা পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গাজীপুর বিআরটিএতে বর্তমানে সপ্তাহে একটি বা দুটি পরীক্ষার বোর্ড বসে। মাসে অন্তত ৬০০-৭০০ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। অধিকাংশ হিসাবে চার শতাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। এতে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আট লাখ টাকা।
সূত্র আরও জানায়, মোটরসাইকেল ও সিএনজির রেজিস্ট্রেশনে পৃথক ঘুষ আদায় করা হয়। সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হারুন উর রশিদ এসব বাণিজ্যের বড় অংশ হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ। ভাগাভাগির হারে দ্বিতীয় স্থানে আছেন পরিদর্শক সুমন।
কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের আবেদন ও ব্যাংকে ফি জমা দিয়েছেন। দালালরা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বোর্ডের টাকাসহ ১০-১৫ হাজার টাকা করে নেন। কর্মকর্তারাই নিজেদের স্বার্থে দালাল লালন করেন।
এদিকে গাজীপুর বিআরটিএর ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ও ২৯ এপ্রিল সাপ্তাহিক ঘটনার আড়ালের প্রিন্ট এবং অনলাইন সংস্করণে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে চলে তোলপাড়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তখনকার সহকারী পরিচালক মো. আবু নাঈমসহ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এরপর ঢাকার গুলশান সার্কেলের সহকারী পরিচালক নাসির উদ্দিন প্রায় এক মাস গাজীপুর বিআরটিএর চলতি দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমান সহকারী পরিচালক হারুন উর রশিদ পোস্টিং নিয়ে গত ৯ জুন যোগদান করেন। প্রথমে তিনি সকালের অফিস দুপুরের পর করতেন। ঝুলে থাকতো কাজ। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তার সূচিরও পরিবর্তন হয়।
এ ব্যাপারে সহকারী পরিচালক হারুন উর রশিদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি। আর পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button