গাজীপুর বিআরটিএতে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চলছেই, নীরবে ভাগ নেন এডি!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতিবাজ চক্রের দাপট অব্যাহত রয়েছে। অবাধে চলছে ঘুষ বাণিজ্য। সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বিষয়টির ওপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঘটনার আড়ালে-তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে তোলপাড়। পরে কিছুদিন রাখঢাক থাকলেও অভিযুক্তদের কিছুই হয়নি।
বর্তমানে ঘুষ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন মোটরযান পরিদর্শক মুহাম্মদ অহিদুর রহমান। সহকারী পরিচালক (এডি) মো. আবু নাঈম নীরব থেকে ভাগ বুঝে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ।
যেভাবে বাণিজ্য : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গাজীপুর সার্কেলে ঘুষ বাণিজ্যের কয়েকটি খাত রয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষার বোর্ড বাবদ বাণিজ্য বেশ আলোচিত। লেনদেনের জন্য লালন করা হয় দালাল।
বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী অফিসিয়াল নিয়ম-কানুন জানেন না। তারা হয়রানি এড়াতে দালালদের দ্বারস্থ হন। কর্মকর্তারা বোর্ডে পাস কার্ড বাবদ দালালদের মাধ্যমে প্রার্থীপ্রতি দুই হাজার টাকা করে নেন। তবে কিছু প্রার্থী নিজ দক্ষতায় বিনা টাকায় উত্তীর্ণ হন।
দালালরা বোর্ডের টাকা অফিসের নির্ধারিত কর্মচারী ও হেলাল নামের এক উমেদারের কাছে দেন। পরে তা মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমানের কাছে জমা হয়। সেখান থেকে পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
বেশ কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, তারা দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ও ব্যাংকে ফি জমা দিয়েছেন। দালালরা সাধারণত বোর্ডের টাকাসহ ১০-১২ হাজার টাকা করে নেন। দালাল ছাড়া লাইসেন্স হয়-এই সংখ্যা খুব কম।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গাজীপুর বিআরটিএতে বর্তমানে সপ্তাহে একটি বা দুটি পরীক্ষার বোর্ড বসে। মাসে ৭০০-৮০০ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। অধিকাংশ হিসাবে ৫০০-৬০০ প্রার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এতে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০-১২ লাখ টাকা।
এদিকে গাজীপুর বিআরটিএর অফিস সহায়ক কামরুজ্জামান ওরফে জামান দালালি ব্যবসায় মেতে উঠেছেন। তার অধীনে রয়েছেন কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন। তারা জেলা প্রশাসন চত্বরের পাবলিক টয়লেটের পাশের দোকানগুলোতে অবস্থান করে কাজ করেন।
পিয়ন কামরুজ্জামানের বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের মিটালু গ্রামে। তিনি ২০১৮ সালে বিআরটিএতে চাকরি পেয়েছেন। এর আগে কামরুজ্জামান পেশায় গাজীপুর বিআরটিএর বড় দালাল ছিলেন।
তিনি জেলা প্রশাসন চত্বরের সরকারি কর্মচারী সমিতির ভাড়া দেওয়া দোকানে নিয়মিত অবস্থান করতেন। কামরুজ্জামান জেলার পরিবহন সেক্টরে এখনো দালাল হিসেবে পরিচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কামরুজ্জামান প্রধান কার্যালয়ের বাইরে প্রথম পোস্টিং পান টাঙ্গাইলে। এডি আবু নাঈমও আগে টাঙ্গাইলে ছিলেন। সেই সূত্রে তদবির করে তিনি ২০২২ সালে গাজীপুরে চলে আসেন।
কামরুজ্জামান গাজীপুরে এসেই পূর্বের দালালি ব্যবসায় মনোযোগ দেন। অতীত পরিচয়ে ও নতুন যারা তার কাছে আসেন, তাদেরকে তিনি তার ভাই এরশাদ, ভাগিনা কাদির, ভায়রা মনির ও চাচা বাবুলের কাছে পাঠিয়ে দেন।
সূত্র আরও জানায়, কামরুজ্জামান অফিসের ভেতরে-বাইরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। শ্যালক মারুফ তার সঙ্গে অফিসের ভেতরে কাজ করেন। ক্যাশিয়ার খ্যাত পরিদর্শক অহিদুর রহমান তাকে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করছেন। এভাবে তারা মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে অফিস সহায়ক কামরুজ্জামানের সঙ্গে গত শনিবার বিকেলে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।
অপরদিকে জেলা প্রশাসন দালাল প্রতিরোধে কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে। সাবেক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হুমায়ুন কবির দুই দালালকে আটক করে জেলে পাঠিয়েছিলেন। পরিদর্শক অহিদুর রহমানের ইশারায় দালালদের বিচরণ আবার বেড়েছে।
সহকারী পরিচালক আবু নাঈম ইতিপূর্বে ঘটনার আড়ালে-কে বলেছেন, অফিসে থেকে কারও দালালি করার সুযোগ নেই। দালালদের ব্যাপারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এডি আবু নাঈমের উদ্যোগে দালাল প্রতিরোধে কোন তৎপরতা নেই। জেলা প্রশাসন স্বেচ্ছায় অভিযান না চালালে কোন অভিযান হয় না।
আরও পড়ুন : গাজীপুর বিআরটিএতে ‘পরীক্ষার বোর্ডের’ নামে বাণিজ্য, মাসে আদায় ১২ লাখ!