গাজীপুরের শিরিরচালায় পৌনে ৪ বিঘা সরকারি পুকুর গিলছে লেবেল ফ্যাক্টরি!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের বাঘের বাজার থেকে অল্প পূর্ব দিকে ইভিন্স গ্রুপ। সেখান থেকে কিছুদূর উত্তরে ট্রিমকো গ্রুপের লেবেল ফ্যাক্টরি।
বৃহৎ আয়তনের বাউন্ডারি ওয়ালের পশ্চিম ও উত্তর পাশ ঘেঁষে সিএস ২৫৯ নং দাগের বনভূমি। দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ দিয়ে রেকর্ডের রাস্তা।
রেকর্ডের রাস্তা সংলগ্ন উত্তর পাশের সিএস ২৫৮ নং দাগের এক একর ২৪ শতাংশ খাস পুকুর দখল করা হয়েছে। এখন ধীরে ধীরে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে পৌনে চার বিঘা আয়তনের পুকুরটির প্রায় তিন বিঘা ভরাট করে কারখানার কার্যক্রম সম্প্রসারণের পাঁয়তারা চলছে। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে কর্মচারীদের থাকার জন্য কয়েকটি টিনশেড রুম করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ওই পুকুর শিরিরচালাসহ আশপাশে ‘চাডার পুকুর’ নামে পরিচিত। পুকুরটি মানুষের নানা উপকারে আসত। বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় আমিন কাইয়া পুকুরের নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে ট্রিমকো গ্রুপ তার কাছ থেকে পুকুর কিনে উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করে।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গভীর এই পুকুর শুধু দখল নয়, চোখের সামনে গিলে ফেলা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব চললেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। সরকারি সম্পদ ও পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ভবানীপুর বিট অফিস জানায়, কারখানাটির দুই পাশে গেজেটভুক্ত বনভূমি ও দুই পাশে হালট থাকলেও মালিক পক্ষ ডিমারকেশন ছাড়াই বাউন্ডারি ওয়াল ও নতুন ভবন নির্মাণ করেছে। গত বছর কাজ চলার খবর পেয়ে নিষেধ করলেও তারা মানেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রিমকো গ্রুপ এভাবে দখলযজ্ঞ চালিয়েও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছে। কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করে পরিদর্শন প্রতিবেদন দিয়েছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ডিমারকেশন এবং বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র ব্যতীত ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, সরকারি পুকুর প্রাকৃতিক জলাধার। এই জলাধার ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই পুকুর সিএস রেকর্ডে ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত হলেও আরএস রেকর্ড ব্যক্তি নামে হয়েছে। রেজিস্টারে শুধু রেকর্ড সংশোধনীর মামলা করতে হবে লিখেই দায় সেরেছেন ভূমি কর্মকর্তা। ভরাটের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই। দীর্ঘদিনেও কোন মামলা করা হয়নি।
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, সরকারি সম্পদ সিএস রেকর্ডমূলে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। আরএস রেকর্ড ভুলবশত অন্যের নামে হয়ে থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা করার নির্দেশনা রয়েছে। ওই ঘটনায় কারও যোগসাজশ আছে কি না, খতিয়ে দেখা উচিত।
এ ব্যাপারে কারখানায় গেলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলতে বলেন। তিনি সেখানকার মোবাইল নম্বর দিতেও অস্বীকৃতি জানান। পরে আরেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল কাদের ফোন করে মালিক পক্ষের বক্তব্য জানাবেন বললেও আর সাড়া দেননি।