গাজীপুরের সালনা ভূমি অফিসে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য, দালালরা হর্তাকর্তা!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের সালনা ভূমি অফিসে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য চলছে। উমেদার নামধারী দালালরা নিয়ন্ত্রণ করছেন অফিস।
দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চললেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে জনসাধারণের হয়রানি ও ভোগান্তি বাড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সালনা বাজারের উত্তরে সিটি করপোরেশনের জোনাল অফিসের পূর্ব পাশে সালনা ভূমি অফিস অবস্থিত। বেশ কয়েকজন দালাল অফিসের ভেতরে চেয়ার-টেবিলে বসে সরকারি কর্মচারীর মত জমির নামজারির ফাইল তৈরি ও খাজনা আদায়ের কাজ করছেন।
কিছু দালাল এলাকাভিত্তিক বেশ পরিচিত। কিছু সেবাপ্রার্থী সরাসরি তাদের সঙ্গে দেখা করেন। আবার কিছু সেবাপ্রার্থী ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মাহ্ আলমের সঙ্গে দেখা করলে তিনি দালালদের দেখিয়ে কথা বলতে বলেন।
একাধিক দালালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় লেনদেনের কাজের বিষয়ে নায়েব নিজে চুক্তি করেন। বাকিগুলো তাদের মাধ্যমে হয়। সালনা ভূমি অফিসের সবচেয়ে বড় দালাল কাপাসিয়ার আলম। তিনি দেড় যুগ ধরে অফিসে বসে দালালি করছেন। তাকে কেউ কেউ ‘ছোট নায়েব’ বলেও ডাকেন।
কয়েক দিন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, দালাল আলম নথিপত্র ও রেজিস্টার নিয়ে খুবই ব্যস্ত। লোকজন তার কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। দিন শেষে তিনি কিছু নথিপত্র গাজীপুর শহরের বরুদা এলাকার বাসায় নিয়ে যান।
জোলারপাড়া এলাকার তাসলিমা বেগমের এক স্বজন সালনা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে পৌনে দুই শতাংশ জমির খারিজ করেন। নথি নম্বর ২০৫৪/২০২২-২৩। দালাল আলম তার কাছ থেকে আট হাজার টাকা নিয়েছেন।
অফিসের ভেতরে কাজ করা আলোচিত দালালদের মধ্যে আরও আছেন বেলায়েত, লুৎফর, রেজাউল, সোহরাব, মহসিন ও রওশন আরা। কিছু দালাল অফিসের বাইরে চায়ের দোকান ও ফটোকপির দোকানে অবস্থান করেও খারিজ ব্যবসা করছেন।
গজারিয়াপাড়া এলাকার ইজাদুর রহমান সালনা ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে আড়াইশ প্রসাদ মৌজায় পৌনে দুই শতাংশ জমির খারিজ করেন। নথি নম্বর ১৪৮১/২০২৩-২৪। সেখানে দালাল বেলায়েত তার কাছ থেকে দুই দফায় ১১ হাজার টাকা নেন।
একই মৌজায় পৌনে দুই শতাংশ জমির খারিজ করেছেন মুরাদ হোসেন। নথি নম্বর ১৪৮২/২০২৩-২৪। তার কাছ থেকে দালাল বেলায়েত দুই দফায় নিয়েছেন সাড়ে ১১ হাজার টাকা।
গজারিয়াপাড়া এলাকার শামসুল হকের ছেলে শরীফ দালাল বেলায়েতের মাধ্যমে জমির খারিজ করেছেন। তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা।
এ ছাড়া বেলায়েতের মাধ্যমে তিনটি দাগের নয়টি পরচা তোলা হয়েছে। এতে তাকে পরচাপ্রতি ৪০০ টাকা করে তিন হাজার ৬০০ টাকা দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, দালাল বেলায়েতের বাড়ি পোড়াবাড়ী এলাকায়। সদর এসিল্যান্ড অফিসেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দালালদের সঙ্গে চুক্তি না করলে নানা কারণ দেখিয়ে হয়রানি করা হয়।
তারা আরও জানান, নায়েবরা বিভিন্ন তদন্ত কাজেও একাধিক দালালকে সঙ্গে নিয়ে যান। অনেকে বড় দালালদের অফিসের স্টাফ মনে করেন। চক্রটি এভাবে মিলেমিশে মাসে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছে।
এ ব্যাপারে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মাহ্ আলমের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।