গাজীপুরে সরকারি পুকুর গিলে ফেলল লেবেল ফ্যাক্টরি, উদ্ধারের উদ্যোগ নেই!

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরে পৌনে চার বিঘা সরকারি পুকুর দখলের ঘটনায় ট্রিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে অব্যাহত রয়েছে ভরাটযজ্ঞ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় এই পুকুর পরিবেশ ও জনসাধারণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ উদ্ধারে প্রশাসনের দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এর আগে বিষয়টির ওপর গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনার আড়ালে-তে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তদন্ত হয়।
সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাফে মোহাম্মদ ছড়া শিরিরচালা এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তার সঙ্গে ছিলেন মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবদুল জাব্বার।
তবে ট্রিমকো গ্রুপের এই লেবেল ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা এসিল্যান্ডকে তদন্ত কাজে কোন সহযোগিতা করেননি। ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পরে কথা বলবেন বলে তারা জানিয়ে দেন।
এরপর অগ্রগতির আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। এসিল্যান্ড রাফে মোহাম্মদ ছড়া ইতিপূর্বে বদলি হয়ে চলে গেছেন। রাজস্ব প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তাও বদলি হয়েছেন।
যেভাবে দখলযজ্ঞ : বাঘের বাজারের পূর্ব-উত্তর দিকে শিরিরচালা এলাকার সিএস ২৫৮ নং দাগের এক একর ২৪ শতাংশ আয়তনের পুকুরটি ১ নং খতিয়ানভুক্ত খাস পুকুর। এটা স্থানীয়ভাবে ‘চাডার পুকুর’ নামে পরিচিত। পুকুরটি গভীর ছিল।
বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় আমিন কাইয়া পুকুরের নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে ট্রিমকো গ্রুপ তার কাছ থেকে পুকুর কিনে উঁচু বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে দখলে নেয়। ইতিমধ্যে কারখানা সম্প্রসারণের জন্য মাটি ফেলে প্রায় তিন বিঘা ভরাট করা হয়েছে। অবশিষ্ট এক বিঘা ধীরে ধীরে ভরাট করা হচ্ছে।
আলোচিত পুকুর সিএস রেকর্ডে খাস খতিয়ানভুক্ত হলেও আরএস রেকর্ড ব্যক্তি নামে হয়েছে। যদিও সরকারি সম্পদ সিএস রেকর্ডমূলে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। আরএস রেকর্ড ভুলবশত অন্যের নামে হয়ে থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা করার নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু ওই ঘটনায় কয়েক বছরেও রেকর্ড সংশোধনীর মামলা করা হয়নি। দখল ও ভরাট কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ভূমি কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেননি।
পেয়েছে পরিবেশের ছাড়পত্র : লেবেল ফ্যাক্টরির পশ্চিম ও উত্তর পাশ ঘেঁষে সিএস ২৫৯ নং দাগের সংরক্ষিত বনভূমি। দক্ষিণ ও পূর্ব পাশ দিয়ে রেকর্ডের রাস্তা। এই অবস্থায় সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা থাকলেও মালিক পক্ষ ডিমারকেশন ছাড়াই বাউন্ডারি ওয়াল ও নতুন ভবন নির্মাণ করেছে।
এতে কিছু বনভূমি কারখানাটির দখলে চলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিট অফিস একবার কাজ বন্ধ রাখতে বললেও মালিক তোয়াক্কা করেননি।
এত কিছুর পরও লেবেল ফ্যাক্টরির অনুকূলে পরিবেশগত ছাড়পত্র দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রকৃত তথ্য গোপন করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ। অথচ নিয়ম অনুযায়ী বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ডিমারকেশন এবং বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র ব্যতীত ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেও বলা হয়েছে, সরকারি পুকুর প্রাকৃতিক জলাধার। এই জলাধার ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ। কেউ আইন লঙ্ঘন করলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে।
বিষয়টি ঘটনার আড়ালে-তে প্রকাশিত হওয়ার পরও পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎপরতা দেখা যায়নি। অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া আর্থিক সুবিধা নিয়ে কারসাজির ঘটনা ধামাচাপায় সহযোগিতা করেছেন বলে জানা গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button