গাজীপুরে ডিমারকেশন ছাড়াই কারখানার গোডাউন, বন দিয়ে রিসোর্টের রাস্তা!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের ধলাদিয়া এলাকার ডার্ড কম্পোজিট কারখানার পূর্ব পাশে গ্লোব গ্লোভস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। বৃহৎ কারখানাটির উত্তর পাশে গোডাউন নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রায় এক বিঘা আয়তনের ওই জমির পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর পাশ ঘেঁষে সংরক্ষিত গজারি বন ও আকাশমনি বাগান। স্থানটি ঢাকা বন বিভাগের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের অধীন।
কারখানার মালিক পক্ষ গত মাসে গোডাউনের নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। বালু ফেলে জমি ভরাট করে এখন পিলার স্থাপনের কাজ চলছে। কোথাও মাপজোখের কোন খুঁটি নেই।
নির্মাণাধীন এই স্থাপনা বন ঘেঁষে হলেও বন বিভাগের সঙ্গে যৌথ ডিমারকেশন করা হয়নি। ফলে বন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্লোব মোজা কারখানার পুরনো স্থাপনার ডিমারকেশন আছে। নির্মাণাধীন গোডাউন অংশের কোন ডিমারকেশন নেই। বিট অফিস দুই-আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে কারখানাটিকে সুবিধা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
রেঞ্জ অফিসের দক্ষিণ দিকে ফাওগান রোডে প্রায় দুই কিলোমিটার এগোলে পূর্ব পাশে নিশ্চিন্তপুর টেকপাড়া পোলট্রি রাস্তা। ঘন গজারি বনের ভেতর দিয়ে পায়ে হাঁটার এই পথ বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের কার্যক্রম চলছে।
রাস্তাটির অপর প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ‘গ্রে ডি স্টুডিও’ নামে একটি রিসোর্টের কাজ চলছে। দক্ষিণ পাশের বন ঘেঁষে করা হয়েছে লেক। কিন্তু ডিমারকেশনের কোন খুঁটি পাওয়া যায়নি।
রিসোর্টের ঢাকাস্থ মালিক পক্ষ স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে বনের মধ্যকার ওই রাস্তা ইটের সলিং করার চুক্তি করে। পরে তারা চলতি মাসে বিট অফিসে তিন লাখ টাকা দিয়ে বালু ফেলে ইট বসানোর কাজ শুরু করেন বলে অভিযোগ।
বন দিয়ে গ্রে ডি রিসোর্টের রাস্তা
এক পর্যায়ে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিট কর্মকর্তা এ কে এম ফেরদৌস ও বনপ্রহরী ফিরোজ শেখ চাপে পড়েন। পরে তারা রাস্তা বন্ধের নামে ৭০০-৮০০ ফুট দৈর্ঘ্য অংশে আকাশমনি চারা রোপণ করেন।
তবে চারাগুলো রাস্তার দুই পাশে সারি ধরে রোপণ করা হয়েছে। মাঝখানে গাড়ি চলাচলের জন্য ৮-১০ ফুট করে ফাঁকা রাখা হয়েছে।
রাস্তায় ইট বসানোর চিত্র
এ ঘটনায় বনের ক্ষয়ক্ষতি হলেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে না। তারা আবার ধীরে ধীরে রাস্তায় ইট বসানো শুরু করেছেন।
আতলড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফার বাড়ির কাছে সুফল প্রকল্পের পাশে কয়েক বছর আগে আকাশমনি বাগান সৃজন করে বিট অফিস। বাগানটিতে প্রায় আড়াই হাজার চারা রোপণ করা হয়।
গত মাসে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি তিন শতাধিক চারা কেটে প্রায় দেড় বিঘা বনভূমি দখল করেন। অভিযোগ উঠলে বিট অফিস আবার চারা রোপণ করে। কিন্তু বনের বিপুল ক্ষতিসাধন হলেও ওই অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে না।
ধলাদিয়া এলাকায় ঢাকা-কাপাসিয়া রোডের দক্ষিণ পাশে বনভূমি দখল করে নতুন একটি পাকা দোকান নির্মাণ করেন মহব্বত আলী ওরফে হঠাৎ মুন্সি। অভিযোগ উঠলে একবার অর্ধেক অংশ ভেঙে দেওয়া হয়।
পরে বনপ্রহরী ফিরোজ শেখ ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে বাকি অংশ না ভাঙা ও মামলা না দেওয়ার কথা বলে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। বাকি অংশ অদ্যাবধি ভাঙাও হয়নি।
হঠাৎ মুন্সির দোকানের পাশে জমি কিনে বাড়ি করেছেন টিপু। চলতি মাসে তিনি বন ঘেঁষে নতুন বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ শুরু করেন।
এ নিয়ে অভিযোগ উঠলে বিট অফিস কাজ বন্ধ করে দেয়। টিপু কাজ শুরুর আগে বনপ্রহরী ফিরোজ শেখের মাধ্যমে অফিসে লেনদেন করেছেন বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট একজন জানান, টিপু যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন, ওই ব্যক্তির ডিমারকেশন অনেক আগের। মাপজোখ ঠিক না থাকায় ভেতরে সিএস ৩১৭ নং দাগের বনভূমি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট কর্মকর্তা এ কে এম ফেরদৌসের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটে দখল বাণিজ্য ধামাচাপার পাঁয়তারা