শ্রীপুরে বনের গাছপালা কেটে ‘কম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা’ নির্মাণ করছে এলজিইডি!
ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের শ্রীপুরে সংরক্ষিত গজারি বনের গাছপালা কেটে পাকা রাস্তা নির্মাণের কার্যক্রম চালাচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বন ও জীববৈচিত্র্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজের পেছন থেকে পেলাইদ পর্যন্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আড়াই কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। এর মধ্যে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ সদর বিটের গাজিয়ারন, গাড়ারন ও পটকা মৌজার বনভূমির ওপর দিয়ে করা হচ্ছে।
দুই কোটি টাকারও বেশি বাজেটের কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পূর্ণতা এন্টারপ্রাইজ। ইতিমধ্যে ভেকু দিয়ে বনের বিপুল পরিমাণ মাটি এবং শত শত কপিচ ও গজারি গাছ কাটা হয়েছে।
গত ১৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে জেলা উন্নয়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নতুন রাস্তা নির্মাণের পূর্বে যাচাই-বাছাই ও বনের ক্ষতিসাধন করে কোন রাস্তা নির্মাণ না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কিন্তু এলজিইডির কর্মকর্তারা বিশেষ সুবিধা নিতে বিধিবদ্ধ কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে বনবিনাশী প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। বন বিভাগ বাধা দিয়ে ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি চালাচালি করেও তাদের থামাতে পারছে না।
নির্মাণাধীন রাস্তাটির প্রায় এক কিলোমিটারের আশপাশে জনবসতি নেই। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিও নেওয়া হয়নি।
শ্রীপুর রেঞ্জ অফিস জানায়, পায়ে হাঁটার ওই কাঁচা রাস্তায় পিচ ঢালাইয়ের উদ্দেশে বনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। কাজ বন্ধ রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ঠিকাদারকে বলা হলে তিনি কাজ করবেন না মর্মে রেঞ্জ কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমানের কাছে লিখিত অঙ্গীকার করেন। কিন্তু কাজ বন্ধ হচ্ছে না।
ঠিকাদার সোহেল মৃধা বলেন, রাস্তাটি যে বনভূমির ওপর দিয়ে গেছে, তা তিনি জানতেন না। মন্ত্রী-এমপিরা এলজিইডিকে নতুন রাস্তা করার কথা বললে কর্মকর্তাদের হুঁশ থাকে না। ক্ষতিগ্রস্ত হন ঠিকাদাররা।
এ ব্যাপারে গাজীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, বিষয়টি সমাধানের জন্য মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে বনভূমি দিয়ে রাস্তা করতে হলে বন বিভাগকে আগে থেকে জানানো হবে।
ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, বনের মধ্যে এ ধরনের রাস্তা বনাঞ্চলের জন্য হুমকি। জাতীয় স্বার্থে রাস্তার প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। প্রতিটি দপ্তরে চিঠি দেওয়ার পরও রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চলছে।