কাপাসিয়া পাইলট হাইস্কুলের ৫ শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্য রমরমা

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন।

এতে একদিকে ক্লাসে যথাযথ পাঠদান হচ্ছে না। অপরদিকে বাড়তি টাকা গুনতে গিয়ে অভিভাবকরা পড়ছেন আর্থিক চাপে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্কুলের পশ্চিম পাশে শীতলক্ষ্যা হাসপাতালের পেছনে খোরশেদা বেগমের বাড়ির তিন রুম ভাড়া নিয়ে একটি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে বিজ্ঞানের শিক্ষক আলতামাসুল ইসলাম, ইংরেজির শিক্ষক সেলিমা বেগম ও ধর্মের শিক্ষক মো. জাকারিয়া কোচিং করাচ্ছেন।

এই সেন্টারে স্কুলটির ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে মাসে আদায় হয় দেড় লাখ টাকা।

একটি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ একাধিক অভিভাবক জানান, কোচিং সেন্টারটি চলছে তিন বছর ধরে। করোনার ছুটিতেও চালু ছিল। যারা কোচিং করে না, ক্লাসে তাদেরকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারা বাধ্য হয়ে সন্তানদের কোচিংয়ে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আলতামাসুল ইসলাম আলোকিত নিউজকে বলেন, তিনি ওই সেন্টারে ১৫-১৬ জন ও বাসায় তিন-চারজন করে দুই ব্যাচ পড়ান। যেহেতু সমালোচনা, আর পড়াবেন না।

সেলিমা বেগম আলোকিত নিউজকে বলেন, সবাই পড়ায়, তাই তিনিও পড়ান। তাদের সেন্টারে শিক্ষার্থী ৩০-৩৫ জন হবে। সবাই এক হাজার টাকা করে দেয় না, কেউ কেউ ৫০০-৭০০ দেয়।

এদিকে বরুন রোডের সাবেক রিংকু মাল্টিমিডিয়া স্কুলে কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন ইংরেজির শিক্ষক মনির হোসেন।

তিনি বড় কোচিংবাজ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তার সেন্টারে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যদের তুলনায় বেশি।

মনির হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, তিনি সকালে ও বিকেলে ৩০-৪০ জন পড়ান। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সন্তান সাত-আটজন। অন্যরা হরিমঞ্জুরী, বরুন, বঙ্গতাজ ও পাবুর স্কুলের।

অনুমতি প্রসঙ্গে বলেন, তারা গত বছর প্রধান শিক্ষকের অনুমতি সাপেক্ষে পড়িয়েছেন। এ বছর তালিকা দেওয়া হয়নি, দেওয়া হবে। ১০-১৫ জন করে একাধিক ব্যাচ পড়ানো যাবে, এ রকম নীতিমালা আছে।

এ ছাড়া পাবুর রোডের আকবর আলীর বাড়িতে বাসা কাম কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন গণিতের শিক্ষক আক্তার হোসেন। তার সেন্টারে শিক্ষার্থী শতাধিক।

আক্তার হোসেন আলোকিত নিউজকে বলেন, কিছু প্রাইভেট পড়াই, কিন্তু কোচিং সেন্টার না। শিক্ষার্থী আমাদের প্রতিষ্ঠানের বেশি, বাইরের কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষকের প্রশ্রয়ে অভিযুক্তরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। অভিযোগ পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা একবার তদন্ত করেছিলেন। এরপর রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অথচ নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জনকে পড়াতে পারেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বা অন্য কোথাও পড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ফাইজ উদ্দিন ফকির আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি প্রধান শিক্ষক, ওরা হল আমার সন্তান-সন্তুতি। কোন কথা বলতে হলে আপনি স্কুলে আসবেন। ফোনে আমি আপনার সাথে কথা বলতে আগ্রহী নই।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা আলোকিত নিউজকে বলেন, আমি কোভিডের আগে তদন্ত করে প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর তো সবই বন্ধ ছিল। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানি না।

আরও খবর

Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker