গাজীপুরের মির্জাপুর ভূমি অফিসে ঘুষ বাণিজ্য, সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুরের মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস সদর উপজেলার মধ্যে বৃহত্তম তহশিল অফিস। পিরুজালী ও ভাওয়ালগড় ইউনিয়ন এই অফিসের অন্তর্ভুক্ত। অফিসটিকে ঘিরে ঘুষ-দুর্নীতির চক্র গড়ে উঠেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অধীন মির্জাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস মির্জাপুর বাজারে অবস্থিত। অফিসে ঢুকতেই ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাসহ কর্মচারীদের বড় রুম। পূর্ব পাশের রুমে বসেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল আলীম।
পশ্চিম পাশের রুম অফিস চলাকালীন সময়ে তালাবদ্ধ থাকে। রুমটির পশ্চিম পাশ দিয়ে একটি বিকল্প দরজা। ভেতরে চেয়ার-টেবিল ও ল্যাপটপ-প্রিন্টার।
অফিসের গুরুত্বপূর্ণ এই রুমে অন্তত নয়জন উমেদার নামধারী দালাল নিয়মিত কাজ করছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের দৃষ্টি এড়াতে মূল দরজা তালাবদ্ধ রাখা হচ্ছিল।
জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম গাজীপুরে যোগদানের কিছুদিন পর দালালদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেন। এরপরও কর্মকর্তারা কৌশল পাল্টে দালাল লালন অব্যাহত রেখেছেন।
দালাল সোহেল রানা, রহিম মিয়া ও আবদুল হক এখনো অফিসের ভেতরে কাজ করেন। জনসাধারণ জমির নামজারির বিষয়ে নায়েবদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা দালাল ও কর্মচারীদের দেখিয়ে কথা বলতে বলেন। পরে তারা চুক্তি করে অনলাইনে আবেদনসহ সব করে দেন।
অন্য দালালরা অফিসের বাইরে বিভিন্ন দোকানে অবস্থান করে কাজ করছেন। তারা অফিস সময়ের পর ভেতরে ঢুকে ফাইল অনুযায়ী হিসাব বুঝিয়ে দেন। দালালি ব্যবসা করে কেউ কেউ বাড়ি-গাড়ির মালিকও হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল আলীম আগে শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ছিলেন। গত ১৫ নভেম্বর তাকে মির্জাপুর ভূমি অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়। তিনি আগেও এই লোভনীয় অফিসে কর্মরত ছিলেন। তার টেবিলে টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না।
কয়েকজন সেবাপ্রার্থী জানান, মির্জাপুর ভূমি অফিসে জমির ধরন ও পরিমাণ অনুযায়ী ঘুষ নেওয়া হয়। সাধারণ খারিজে ১০-১৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
এ ছাড়া মূল জোতের খাজনা বেশি হলে কর্মকর্তারা ঘুষের বিনিময়ে সরকারের রাজস্ব আদায় কম দেখান। এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এভাবে মাসে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আবদুল আলীমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, অফিস থেকে সব দালাল বের করে দেওয়া হয়েছে। অফিসের বাইরে যদি দালাল বসে থাকে, মানুষ কাজ দেয়, তাহলে কিছু করার নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button