গাজীপুর বিআরটিএতে ‘পরীক্ষার বোর্ডের’ নামে বাণিজ্য, মাসে আদায় ১২ লাখ!

ঘটনার আড়ালে প্রতিবেদন : গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতিবাজ চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ঘুষ ছাড়া মিলছে না সেবা। ফলে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
দীর্ঘদিন ধরে এসব চললেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোরালো নজরদারি নেই। দালাল প্রতিরোধে সম্প্রতি জেলা প্রশাসন কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গাজীপুর সার্কেল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উত্তর পাশে দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক রুমের সামনে কোন কাজে কারও সঙ্গে লেনদেন না করার পরামর্শ দিয়ে নোটিশ সাঁটানো রয়েছে।
দালালদের অনেকে আগে অফিসের সামনের ছাদে অবস্থান করতেন। লোকজন ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে তাদের শরণাপন্ন হতেন। চুক্তিতে হচ্ছিল কাজ।
গত ১১ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) হুমায়ুন কবির আকস্মিক অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় বিআরটিএর ছাদ থেকে দালাল শান্তকে আটক করে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই দিন ব্যবহারিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে রথখোলা থেকে দালাল সাত্তারকে আটক করে ২০ দিনের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এরপর দালালদের অবস্থানগত চিত্র পাল্টে যায়। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের চিত্র মোটেও পাল্টায়নি। দালালরা এখন আশপাশে অবস্থান করে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশির ভাগ সেবাপ্রার্থী অফিসিয়াল নিয়ম-কানুন জানেন না। তারা হয়রানি এড়াতে দালালদের দ্বারস্থ হন। লারনার কার্ড এখন অনলাইনে আবেদনের পর পাওয়া যায়। মূলত পরীক্ষার বোর্ডের নামে বাণিজ্য হয়।
কর্মকর্তারা বোর্ডে পাস কার্ড বাবদ প্রার্থীপ্রতি দুই হাজার টাকা করে নেন। এই টাকা দালালদের মাধ্যমেই বেশি আদায় করা হয়। টাকা না দিলে ফেল করিয়ে হয়রানি করা হয়।
তবে কিছু প্রার্থী নিজ দক্ষতায় উত্তীর্ণ হন। কেউ কেউ আবার বিশেষ কারও মাধ্যমে সহকারী পরিচালকের (এডি) সুপারিশ নেন।
দালালরা বোর্ডের টাকা অফিসের নির্ধারিত কর্মচারী ও হেলাল নামের এক উমেদারের কাছে দেন। পরে তা মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমানের কাছে জমা হয়। সেখান থেকে পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
সুযোগ পেয়ে অফিসের এক কর্মচারীও দালালি ব্যবসায় মেতে উঠেছেন। তার অধীনে রয়েছেন কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন। তারা জেলা প্রশাসন চত্বরের পাবলিক টয়লেটের পাশের দোকানগুলোতে অবস্থান করে কাজ করেন।
বেশ কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা দালালদের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ও ব্যাংকে ফি জমা দিয়েছেন। দালালরা সাধারণত বোর্ডের টাকাসহ ১০ হাজার টাকা করে নেন। দালাল ছাড়া লাইসেন্স হয়-এই সংখ্যা খুব কম।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, গাজীপুর বিআরটিএতে বর্তমানে সপ্তাহে একটি বা দুটি পরীক্ষার বোর্ড বসে। মাসে ৭০০-৮০০ প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। অধিকাংশ হিসাবে ৫০০-৬০০ প্রার্থীর কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। এতে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০-১২ লাখ টাকা। বাণিজ্যের আরও খাত রয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী পরিচালক মো. আবু নাঈমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার আড়ালে-কে বলেন, পরীক্ষার বোর্ডের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। দালালদের ব্যাপারে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button